সিলেটে হামলায় আহত ছাত্রলীগ কর্মী শাহীনের ডান হাত কেটে ফেলা হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে শাহীনের হাত কেটে ফেলে দেয়া হয়। সোমবার সিলেটের সুবহানীঘাটের জালালাবাদ কলেজের সামনে সিলেট ছাত্রলীগের রাহাত গ্রুপের কর্মী শাহীন আহমদ ও আসিফকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কোপায় হেলমেট পড়া সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার জন্য শিবিরকে দায়ী করেছে ছাত্রলীগ। ঘটনার পর শাহীনকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বিকেলে তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে পাঠানো হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। রাতে পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তাররা শাহীনের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। গতকাল সকালে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত দেন শাহীনের ডান হাত কেটে ফেলতে হবে। দুপুরের দিকে ডাক্তাররা শাহীনের হাতে অস্ত্রোপচার করেন। বিকেলে শাহীনের বোন জামাই কবির আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন ডাক্তাররা বলেছেন, ওই হাতে পচন ধরার সম্ভাবনা ছিল। তবে শাহীনের পা সম্পর্কে এখনো সিদ্ধান্ত জানাননি ডাক্তাররা। শাহীনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। ঢাকায় শাহীনের সঙ্গে অবস্থান করছেন তার পিতা নুর মিয়া, মা দিলারা বেগম ও ভাই ফাহিম। এছাড়া গত সোমবার রাতে শাহীনকে দেখে এসেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা সার্বক্ষণিক তার খোঁজ খবর রাখছেন। সিলেট সদর উপজেলার পীরপুর টুকেরবাজারের নূর মিয়ার ছেলে শাহীন আহমদ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কোনো পদ পদবিতে নেই। তবে সে ছাত্রলীগের রাহাত গ্রুপের কর্মী। সিলেটের মদনমোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আগে সুবহানীঘাটে জালালাবাদ কলেজে পড়ালেখা করত। এদিকে শাহীন ও আসিফের উপর হামলার ঘটনায় সিলেটে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। ঘটনার পর থেকে সিলেটে শিবিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাতে জালালাবাদ কলেজে হামলা চালায়। সোবহানীঘাট এলাকায় একটি কলেজ ও হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় হাসপাতালের সামনে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের পর সোবহানীঘাট উপশহর সড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে ভাঙচুরকারীরা। ভাঙচুরকারীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে সোবহানীঘাট এলাকায় জালালাবাদ কলেজ এবং সিলেট শিশু ক্লিনিক ও জেনারেল হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা হাসপাতালের সামনে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা  মেট্রো ঠ ১১-৮৩৪৮), একটি সিএনজি অটোরিকশা (সিলেট থ ১১-৩০৫১) এবং কলেজের ভেতরে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। কলেজের প্রহরী হায়দার আলী জানান সাড়ে ৮টার দিকে একদল যুবক আকস্মিক হামলা চালায়। হায়দর আলী অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা কলেজের কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে গেছে। এদিকে শাহীনের উপর হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে সনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সুবহানীঘাটে হামলার ঘটনার পর পুলিশ ওই এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। ওই ফুটেজে হামলার দৃশ্য রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশ ফুটেজ পর্যালোচনা করে একজনকে সনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা এডিসি জেদান আল মুছা। তিনি জানিয়েছেন ইতিমধ্যে আসামিদের সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন ও আসিফের উপর হামলার ঘটনায় সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে রাতে নগরীর উপশহর ই-ব্লকের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো তিন-চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ সিলেটে নিরাপত্তা জোরদার রেখেছে বলে দাবি করেন তিনি। শাহীন ও আসিফের উপর হামলার ঘটনায় সিলেটে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল ও সমাবেশ করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn