গরীব-অসহায় বলে কেউ বিচার পাবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না এমন কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গরীব-অসহায়দের বিচার পাওয়ার জন্য প্রত্যেক জেলায় স্থায়ী লিগ্যাল এইড অফিস করে দিয়েছি। এই অফিস গরীব-দুঃখি মানুষকে আইনি সহায়তা দেবে। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে এমন লোক আছেন যার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। অনেকে আছে অসহায়, গরীব। তারা কিভাবে বিচার পাবে? তাদেরও তো বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। এ সময় বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করবেন। ক্ষমতার ক্ষেত্রে আমিই বড় ভাববেন না। ক্ষমতা কারো চেয়ে কারো কম নয়। একে অপরকে দোষারোপ করলে রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারবে না। এককভাবে কেউ ক্ষমতার অধিকারী- এ কথা কেউ বলতে পারবেন না। সবাই মিলে সবাইকে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।

তিনি বলেন, অর্থের অভাবে কেউ বিচার পাবে না, তা হতে পারে না। অসহায়-গরীব-দুঃখি সকলেই যাতে ন্যায় বিচার পায় আমরা সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বিচার না পাওয়ার যে কী জ্বালা তা আমার চেয়ে বেশি আর কেউ বুঝতে পারবে না। কারণ, আমার বাবা তার জীবনের বড় একটা অংশ জেলে কাটিয়েছেন। শুধুমাত্র মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে তিনি বছরের পর বছর জেলে বন্দী থেকেছেন। অথচ তার কোনো অপরাধ ছিল না। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বার বার জেল খেটেছেন এবং জেলের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। ‘পেছনের দরজা দিয়ে বা বন্দুকের নল দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে তারা জনগণের ভাষা বুঝতে পারে না’ এমন কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের কাজ হচ্ছে, জনগণের স্বার্থে যারা কথা বলবে, তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো আর তাদের দাবিয়ে রাখা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যারা স্বপরিবারে হত্যা করেছে তাদের বিচার করেনি পরবর্তী সরকার। বরং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন সরকার শুধু তাদের দায়মুক্তিই দেয়নি, খুনিদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক, রশিদ ও হুদাসহ অন্যদের সংসদ সদস্য, বিরোধী দলের নেতা বানানো হয়েছে। অনেককে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের জন্য ন্যায় বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমাদের সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জনগণের মৌলিক অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করে। জনগণ যাতে ন্যায় বিচার পায় সে জন্য সংসদে আইনগত সহায়তা আইন পাস করি। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তারা আইনটি কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আইনি সহায়তা বলে যে একটি আইন আছে এটা তারা বোঝেইনি। নিজের জেলে থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে সাব জেলে একাকি রাখা হয়েছে। তাই জেলের জ্বালা আমিও বুঝি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn