ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বলির পাঠা বাহুবলের ওসি মনিরুজ্জামান!
বাহুবলে চলছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে বানানো হচ্ছে বলির পাঠা। যেন ‘পাটা পোতায় ঘষা-ঘষি মরিচের কাম সারা’। এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন উপজেলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গোটা উপজেলা জুড়ে চলছে তোলপাড়। জানা যায়, ওসি মনিরুজ্জামানের অপসারণের দাবীতে বুধবার বিকেলে বাহুবল উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সভা। উপজেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। এরপূর্বে গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে হঠাৎকরেই উপজেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ মিছিলের ফটোসেশন। পরে ওসি মনিরুজ্জামানের অপসারণের দাবীতে গোটা উপজেলায় জুড়ে-শোরেই চালানো হয় মাইকিং। ওসি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’। কিন্তু মাইকিং, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গোটা উপজেলায় চলছে তোলপাড়। সাধারণ মানুষসহ খোদ আওয়ামীলীগের বহু নেতাকর্মীর দাবী, ওসি মনিরুজ্জামান ‘অপেক্ষাকৃত সৎও দুর্নীতিমুক্ত’। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ৮ মাস পূর্বে বাহুবলে যোগদান করেন ওসি মনিরুজ্জামান। তার যোগদানের পর থেকে ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তিনি মাদক ও জুয়াসহ সকল অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা। বিশেষ করে উপজেলার মিরপুরে জুয়া ও মাদক নিয়ন্ত্রণে তার ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে দিনে দিনে বাড়ছে তার গ্রহণযোগ্যতা।
যে কারণে অপসারণের দাবী:
এমপি কেয়া চৌধুরী ও বাহুবল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই-এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। দু’জন দু’মেরুতে অবস্থান করেই চালাচ্ছেন সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় এমপি কেয়া চৌধুরী গত মঙ্গলবার বাহুবল থানা প্রাঙ্গণে চৌকিদার ও দফারদের মধ্যে বিতরণ করেন বাইসাইকেল।
উপজেলা পরিষদের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ওই অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাইকে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণে ওসি মনিরুজ্জামানের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি। রাতেই দলীয় কিছু নেতাকর্মীদের দিয়ে ওসির বিরুদ্ধে করানো হয় বিক্ষোভ মিছিলের ফটোসেশন। মধ্যরাতে ওসি’র অপসারণের দাবীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামেই গোটা উপজেলায় চালানো হয় মাইকিং। এরপর গতকাল বুধবার বিকেলে বাহুবল সদরে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সভা।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে উপজেলার খোদ আওয়ামী পরিবারেই চলছে চাপা ক্ষোভ। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে (নাম না প্রকাশ শর্তে) আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী ওসি মনিরুজ্জামানকে ‘অপেক্ষাকৃত সৎও দুর্নীতিমুক্ত’বলেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের দাবী, কতিপয় নেতার ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণেই ওসিকে বলির পাঠা বানানোর অপচেষ্টা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। গতকাল বুধবার দিনব্যাপী মিরপুর ও বাহুবল সদরের বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষের সাথে কথা বললে উঠে আসে একই তথ্য।
তাদের সরল অভিমত, ‘পাটা পোতায় ঘষা-ঘষি মরিচের কাম সারা’। বিভিন্ন চায়ের স্টলের আলাপচারিতায়ও ওসিকে অপেক্ষাকৃত ভালো মানুষ হিসেবেই আখ্যায়িত করেন সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে সচেতন সমাজের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ওসি মনিরুজ্জামান যদি এতই খারাপ হতেন তাহলে এতদিন একটি আইনশৃঙ্খলা সভায়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হল না কেন? এখন হঠাৎকেন অপসারণ দাবী?
অপরদিকে, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকও ছিল সর-গরম। গতকাল বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে উপজেলা যুবলীগের জনৈক নেতা তার নিজস্ব আইডিতে লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজ ভালো মানুষকে গ্রহণ করে না। তাই জাতির কপালে ঘোড়ার ডিম’। যদিও তিনি ওসি’র অপসারণের প্রসঙ্গটি স্পষ্ট করেননি। একই বিষয়ে অপর একটি আইডির স্ট্যাটাসের মন্তব্যে মাহফুজুর রহমান আলম লিখেছেন ‘শত্র“বানানোর জন্য মারপিট করতে হবে না, ভাল কাজ কর এমনিতেই শত্র“তৈরি হয়ে যাবে’। সাংবাদিক আব্দুল হান্নান নানু তার মন্তব্যে লিখেছেন, ‘জুয়ামুক্ত বাহুবল গড়ার ঘোষণাই ওসির জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। এগুলো আওয়ামীলীগের গ্র“পিংয়ের ফসল’। এরকমভাবে বহু ফেইসবুক আইডিতে অগণিত মানুষ ওসি মনিরুজ্জামানের পক্ষে অভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললাম ঘুষ, দুর্নীতির একটি অভিযোগও কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা।