খালেদা জিয়াবসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে খালেদা জিয়া হার্ট এবং কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। এ নিয়ে চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন-চিন্তিত। দলের চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে আজ শুক্রবার সকালে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। গতকাল আমার দেখে একটু ভালো লেগেছে, ভালো লেগেছে যে আমি তাঁর মুখে একটু হাসি দেখেছি। যেটা এই কদিন ছিল না, একেবারেই ছিল না।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল আমি ডাক্তারদের কাছ থেকে তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে যেটা জানতে পেরেছি সেটা হচ্ছে, তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন (শরীরে অক্সিজেনের দ্রবীভূত মাত্রা) এখন বেশ ভালো, তাঁর যে টেম্পারেচার, সেটা এখন নেই এবং তাঁর শ্বাসকষ্ট এখন নেই।’
ফখরুল বলেন, ‘কিন্তু যেটা একটু উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় এটা হচ্ছে যে তাঁর (খালেদা জিয়া) পোস্ট কোভিড (করোনা-পরবর্তী) যে কমপ্লিকেশন (জটিলতা), সেই কমপ্লিকেশনে তাঁর হার্ট এবং কিডনি একটু এফেক্টেড (আক্রান্ত)। এ নিয়ে চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন-চিন্তিত। তাঁরা চেষ্টা করছেন, এটাকে কী করে তাঁরা নিরাময় করবেন।’ ফখরুল বলেন, ‘ডাক্তার সাহেবরা আমাদের যেটা বলেছেন যে তাঁর উন্নত চিকিৎসা উন্নত সেন্টারে যেখানে সমস্ত ইকুইপমেন্ট আছে, যেগুলো দিয়ে এ ধরনের চিকিৎসাগুলো করা সম্ভব, যেটা এখানে নেই। এখানেও (এভারকেয়ার হাসপাতাল) ভালো কিন্তু সেগুলো অ্যাভেইলেবেল না।’ তিনি বলেন, ‘এ কারণে বাইরে চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার থেকে আবেদন করা হয়েছিল, দুর্ভাগ্য আমাদের, এই সরকার সেটা দেয়নি। তারা মনে করে যে খালেদা জিয়া যদি বাইরে যান, গিয়ে হয়তো আবার সুস্থ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করবেন।’
ফখরুল বলেন, ‘ভয় কেন এত, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এত ভয় কেন? একটি মাত্র কারণ যে উনি জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি বা নেতা যদি থাকেন, তিনিই একমাত্র নেতা। আমরা আশাবাদী, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।’ বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, তিনি করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁর করোনাসংক্রান্ত অনেকগুলো জটিলতা দেখা দেয় এবং শ্বাসকষ্ট বোধ করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাতে চাই চিকিৎসকদের, তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের, যাঁরা সম্পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে তাঁর চিকিৎসা করছেন। প্রতিদিন তাঁরা মেডিকেল বোর্ড করছেন, প্রতিদিন তাঁরা তাঁর চিকিৎসার মনিটর করে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা আমেরিকা ও ইংল্যান্ড—এই দুটি দেশে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’
গত ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের অধীনে চিকিৎসাধীন থাকার পর তাঁদের পরামর্শে ২৭ এপ্রিল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৩ মে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকেরা তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। সেদিন থেকে তাঁর সেখানেই চিকিৎসা চলছে। দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয়েছিল ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় একরকম কোয়ারেন্টিনের মধ্যে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ ছিল সীমিত।