চসিক নির্বাচন আলোচনায় বিএনপি’র ৫ নেতা
আগামী বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে পারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। এ নিয়ে তোড়জোড় চলছে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতাদের মধ্যে। বসে নেই বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারাও। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও এ পর্যন্ত দলের অন্তত পাঁচ নেতা নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভেতরে ভেতরে। নেতাকর্মীদের ধারণা, জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ধারাবাহিকতায় বিএনপি চসিক নির্বাচনেও অংশ নেবে। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, গত চসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী এম মনজুর আলম ভোটের দিন নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি দলও বর্জন করেছিলেন। তাই বিএনপিতে এবার নতুন মুখ আসছে সেটা অবধারিত। কিন্তু কে সেই নতুন মুখ? তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে জোর আলোচনা।
তবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সমপাদক আবুল হাশেম বক্কর ইতিমধ্যে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গুঞ্জন চলছে দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহকে নিয়েও। তারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা অনুষ্ঠানে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, মেয়রপ্রার্থী হিসেবে বিএনপির হাইকমান্ডে আলোচনায় আছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দি আসলাম চৌধুরী। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসলাম চৌধুরী সীতাকুণ্ড আসন থেকে বিএনপির হয়ে কারাগার থেকে নির্বাচনে লড়েছিলেন। তার বাড়ি সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট হলেও তিনি নগরীর ৯ নম্বর উত্তর পাহড়তলী ওয়ার্ডের ভোটার।এদিকে নিজকে একক প্রার্থী বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে চট্টগ্রামে আমিই বিএনপির প্রার্থী। কেন্দ্রীয় বিএনপি জরিপ চালিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পেয়েছে আমার নাম। শুধু বিএনপি নয়, অন্য দলের নেতাদের চেয়েও জনপ্রিয়তায় আমি এগিয়ে। কেন্দ্র থেকে আমাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছে।
গত সংসদ নির্বাচনে কারাবন্দি অবস্থায় ডা. শাহাদাত কোতোয়ালি আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তাই নগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে তার এই দাবিকেও অনেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অনেক নেতাকর্মী আবার গত নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী নগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ানকে মেয়র পদে দেখতে চান। তবে আবু সুফিয়ান বলছেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো রাতেই যদি ভোটগ্রহণ হয়ে যায় তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আর না করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সিটি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে দল যাকে মনোনয়ন দেয় তার পক্ষে কাজ করবো। ব্যক্তিগতভাবে আমি মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহী নই। দল চাইলে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে লড়বো।
সুফিয়ান-শাহাদাত ও আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রামের তিন আসন থেকে গত সংসদ নির্বাচনে লড়লেও নির্বাচনের বাইরে ছিলেন নগরীর কোতোয়ালি থানার এনায়েত বাজারের বাসিন্দা নগর বিএনপির সাধারণ সমপাদক আবুল হাশেম বক্কর। তিনি ইতিমধ্যে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হতে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মনোনয়ন পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসন থেকে লড়তে চেয়েছিলাম। তখন সভাপতি আমাকে মেয়র পদে নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন তিনিও আমার জন্য কাজ করবেন। এখন শুনছি উনিও প্রার্থী হতে চান। তবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দল যাকে মনোনয়ন দেয় তার জন্য কাজ করবো। তবে আবুল হাশেম বক্করকে দেয়া প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তা এড়িয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ধরনের কোনো কমিটমেন্ট আমি করিনি। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় দলই আমাকে নির্বাচন করতে বলছে। তবে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে নীতি নির্ধারণকারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দল এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ এক নেতা জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে দলের প্রার্থী হিসেবে সবার আগে থাকবেন আসলাম চৌধুরী। কোনো কারণে যদি তিনি কারামুক্ত হতে না পারেন তবে এক্ষেত্রে আবু সুফিয়ানকে দল বিবেচনা করবে। কারণ তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে জোয়ার সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। নগর ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় পুরো নগরজুড়েই তার পদচারণা ছিল। তিনিই সব বিবেচনায় দলের যোগ্য প্রার্থী। ডা. শাহাদাত হোসেন কিংবা আবুল হাশেম বক্করের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রামে থাকা ওই নেতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডা. শাহাদাতকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। তিনি কারাবন্দি হলেও তার পক্ষে মাঠে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আবুল হাসেম বক্করও মেয়র পদে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের ফোরাম নেবে। জানতে চাইলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সমপাদক ভিপি হারুনুর রশিদ বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি ইতিবাচক চিন্তা করছে। পরিবেশ যদি ঠিক থাকে এবং দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। চট্টগ্রামে প্রার্থী কে কে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, আবু সুফিয়ান, ডা. শাহাদাত হোসেন, এরশাদ উল্লাহ, আবুল হাশেম বক্করের নাম দলে আলোচনা হচ্ছে। তবে প্রার্থী কে হবে তা চূড়ান্ত করবে স্থায়ী কমিটি। তবে দলের কেউ কেউ বিএনপির প্রথম মেয়র মীর নাছির উদ্দিনের ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের নামও বলছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কে করবেন সেটা দল ঠিক করবে। দল যাকে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন দেবেন তার জন্য কাজ করবো। আমি যেহেতু দলের পদে আছি এবং মাঠেও সক্রিয় আমাকে মনোনয়ন দিলে সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেবো।