চিকিৎসার হালচিত্রঃটিউমার অপারেশনে কাটা হল কিডনি
এ সময় ডা. সিরাজুল জানান, পেটের টিউমার অপসারণ করতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। এ কারণে ১২ এপ্রিল উজ্জ্বল তার মেয়েকে রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন বেলা ৩টার দিকে তার মেয়ের পেটে অস্ত্রোপচার করেন ডা. সিরাজুল ইসলাম। ১৭ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে তার মেয়েকে ছুটি দেয়া হয়। ছুটি দেয়ার সময় ১৫ দিন পর তার মেয়েকে আবার ডা. সিরাজুল ইসলামের কাছে নিয়ে যেতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়ি যাওয়ার পর অনুর শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ১৫ দিন পর তার উজ্জ্বল আবার মেয়েকে নিয়ে ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলামের কাছে যান। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, তার মেয়ের ক্যান্সার হয়েছে। এরপর চার মাস ধরে তার মেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে রামেক হাসপাতাল থেকে অনুর পেট আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট আনতে বলা হয়। উজ্জ্বল শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর এলাকার দ্য এপোলো ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে বলা হয়, তার মেয়ের একটি কিডনিই নেই। একটি কিডনি কেটে ফেলা হয়েছে। এপোলো এবং রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, পেটে অস্ত্রোপচারের আগে যে সব ডায়াগনষ্টিক রিপোর্ট আছে, সেসবে অনুর দুটি কিডনিই আছে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর যে রিপোর্ট হচ্ছে তাতে তার একটি কিডনি দেখা যাচ্ছে না।
উজ্জ্বল বলেন, টিউমার অপারেশনের সময় ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম আমার মেয়ের একটি কিডনি কেটে ফেলে দিয়েছেন। এ কারণে আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। আমি একজন সামান্য চা দোকানি। মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমি এ ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই। অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি চাই। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিডনিতে টিউমার ছিল। সে কারণেই ফেলে দেয়া হয়েছে। আর অস্ত্রোপচারের সময় শিশুটির অভিভাবক যারা ছিলেন তাদের জানিয়ে অনুমতি নেয়া হয়েছে। তবে ওই সময় শিশুর বাবা উজ্জ্বল হাসপাতালে ছিলেন না। তবে উজ্জ্বল বলছেন, তার মেয়ের কিডনিতে টিউমার বা সে ক্যান্সারে আক্রান্ত এমন কোনো বিষয় তাদের জানানো হয়নি। তাদের না জানিয়েই অনুর কিডনি কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহানগরীর রাজপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী হাসান বলেন, এ ধরনের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমাকে প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগকারীকে রোগীর সব রিপোর্ট আনতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : রোববার সকালে জেলা শহরের কাউতুলী এলাকার দি আল ফালাহ মেডিকেল সেন্টারে ফারজানা আক্তার (২২) নামে এক প্রসূতির সিজার করা হয়। এ সময় নবজাতকের পেট কেটে ফেলেন চিকিৎসক মারুফা রহমান। ফারজানা জেলার আখাউড়া উপজেলার তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তৌহিদুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে সকালে তাকে জেলা শহরে নিয়ে আসি। এক দালালের খপ্পরে স্ত্রীকে আল ফালাহ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানে মারুফা রহমান নামে এক চিকিৎসক সিজার করে কন্যা সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু নবজাতকের পেটের একপাশে রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা জানান, নাভি কাটতে গিয়ে কাঁচির আঘাত লেগেছে। বিষয়টি জানতে পেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও জেলা সিভিল অফিসের কর্মকর্তারা হাসপাতালে আসেন। তবে তাদের আসার খবর পেয়ে হাসপাতালের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই পালিয়ে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালটিতে যাই। হাসপাতালটির কোনো লাইসেন্স নেই।জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাফফাত আরা সাঈদ বলেন, শিশুটির পেটে ক্ষতের চিহ্ন দেখা গেছে। তবে তেমন গুরুতর নয়। অদক্ষতার কারণেই এমনটা হয়েছে।