ছাতক:: খালের এক পাশে সড়ক, অন্য পাশে ধানি জমি ও জমির মাঝখানে আলপথ (হাঁটার পথ)। মানুষের চলাচল তেমন একটা নেই। তবুও খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিন কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু। সুনামগঞ্জের ছাতকে এমন অদ্ভূত একটি সেতুর উদ্বোধন হলেও সেতুর এক প্রান্তে কোনো সড়ক না থাকায় কোন কাজেই আসছে না এটি। স্থানীয়রা সেতুটিকে অপ্রয়োজনীয় বললেও এলজিইডি বলছে সেতুটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি অংশ।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের আনুজানি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চেলাখাল। খালের দক্ষিণে আনুজানি গ্রাম, উত্তরে ধানি জমি ও চেরা বিল থাকলেও সেখানে মানুষের আনাগোনা খুব কম এবং নেই তেমন ঘনবসতি। সেতুটির দক্ষিণ পাশে কয়েকটা বাড়িঘর থাকলেও উত্তরে ধানি জমি হওয়ায় কোন কাজেই আসছে না সেতুটি। সেতু থেকেও জমির আল ধরেই চলতে হচ্ছে মঈনপুর, করশি গ্রামের মানুষজন যাতায়াত করেন।
জানাযায়, ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তিন কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৬৬মিটার দীর্ঘ ও ৭ মিটার প্রস্থের এ সেতুটি ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধন হলেও সেতুর অপর প্রান্তে কোনো সড়ক নেই। সংযোগ সড়কের পরই ধানি জমি। সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে। অন্যদিকে সেতুটি তুলনামূলক নিচু হওয়ায় ভরা বর্ষায় খালে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন নৌ যান চালকরা।
স্থানীয়রা বলছেন, সামন্য আধা কিলোমিটার এগিয়ে আলীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে চেলা খালের সেতু নির্মাণ করলেও সাধারণ মানুষে কাজে আসতো। বর্তমান সেতুটির এক পাশে কোন সড়ক না থাকায় কোন কাজেই আসছে না এটি। সরকারের তিন কোটি টাকা জলে গিয়েছে বলে জানান তারা।
মঈনপুর এলাকার কৃষক আরশ আলী বলেন, এ ব্রিজ বানাইয়া আমরার কোন লাভ অর না। কারণ ওই আমরারে আইল পাড় অইয়া আওয়া লাগে। ইকানো কোন বিজ্রেরই দরকার আছিল না। বর্ষামাসও এ বিজ্রের লায় বড় নৌকা ও চলে না। আমরা ইকানো ধান করি ফসল ফলাই ধানি জমিত ব্রিজ দিয়া আরও ক্ষতি করা হইলো।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সাগর মিয়া বলেন, এমন একটায় জায়গায় ব্রিজটি দিয়েছেন যার এক পাশে কোন সড়ক নাই। ধানি জমি ও খালের উপর এরকম সড়ক বিহীন ব্রিজ কি কাজে দিবো আমার মাথাত আয় না। সরকারের টাকা জলে গেছে এই ব্রিজটা দরকার আছিল না। আনুজানি গ্রামের কৃষক লোকমান আহমদ বলেন, ধানি জমির মধ্যে সেতু করা হইছে আমরার যোগাযোগ সহজ করার লাগি কিন্তু বিজ্রের একপাশে রাস্তা নাই মানুষরে এখনও আইল পাড় ওইয়া আসা যাওয়া করা লাগে কোন গাড়ি চলে রিকশা চলে না।
নৌকা চলাচলের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর আহমদ হীরা বলেন, এ সেতুটি আমাদের কোন কাজেই আসছে না। বর্ষাকালে নৌকা দিয়া মাল আনা নেওয়া করা যায় না কারণ ব্রিজটির উচ্চতা ছোট। সরকারের একটি অপ্রয়োজনীয় ব্রিজের মধ্যে এটিও একটি। অন্যদিকে স্থানীয়দের ভাষ্য মানতে নারাজ সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম। তিনি সেতুটিকে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি অংশ জানিয়ে বলেন, সেতুটি অপ্রয়োজনীয় নয় এটি আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সেতুটি হওয়ায় এখানকার মানুষ শুষ্ক মৌসুমের পাশাপাশি বর্ষাকালেও যোগাযোগ রক্ষায় উপকৃত হচ্ছেন এবং আশে পাশে গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের কারণে স্থানীয়রা উপকৃত হচ্ছেন, যোগাযোগ উন্নত হয়েছে।
সড়ক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, সেতুটি করার সময় সেতুটি উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য তবে সেতুটির উত্তর পাশে সড়ক করার জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৭৭ বার