ছাত্রলীগ প্রশ্নে সিন্ডিকেটের ‘গোপন’ বৈঠক, বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী
ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে পদে বসাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিশেষ একটি সিন্ডিকেট। বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে রাজধানীর অভিজাত একটি হোটেলে ওই সিন্ডিকেটের ১১ সদস্য রাত আড়াইটা পর্যন্ত বৈঠকও করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গোপন’ বৈঠকের বিষয়টি জানতে পেরে ওই সিন্ডিকেটের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত এক সহকারীর মাধ্যমে ওই সিন্ডিকেটের প্রতি ‘বিশেষ বার্তা’ও পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের কোনো নেতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। দলীয় সূত্রটি জানিয়েছে, ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির দুই নেতা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ছাত্রলীগের প্রভাবশালী সাবেক এক সভাপতি, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের প্রথমসারির এক নেতা, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একজন প্রটৌকল অফিসারসহ ১১ জন ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে নেতা নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনার জন্য সিন্ডিকেট সদস্যরা সন্ধ্যার পর একে একে ওই অভিজাত হোটেল যান এবং রাত আড়াইটা পর্যন্ত বৈঠক করেন। বৈঠকের বিষয়টি জানতে পেরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বিষয়টি তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, ‘রাত আড়াইটা পর্যন্ত তারা বৈঠক করলে দলের কাজ করবে কখন?’
শেখ হাসিনা পরে তার বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোবহান গোলাপের মাধ্যমে ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে বিশেষ বার্তা পৌঁছান। বিশেষ এ বার্তা হচ্ছে, ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট যেন দৌড়ঝাঁপ না করে, দৌড়ঝাঁপ করে কোনো ফায়দা হবে না। প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ বার্তায় আরও বলেন, হোটেলে হোটেলে মিটিং না করে তারা যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা দেন। শেখ হাসিনার এমন বিশেষ বার্তায় মহাভাবনায় পড়েছেন সিন্ডিকেট খ্যাতরা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোবহান গোলাপের মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি এসএমএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই ২৮তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দুইবছর মেয়াদে সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি ও এসএম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় প্রথম দফায় চলতি বছরের ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়। পরে তা পিছিয়ে দ্বিতীয় দফায় ১১ ও ১২ মে সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। এরইমধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ পদে আগ্রহীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদান শুরু হয়েছে। সম্মেলন সফল করার জন্য বিভিন্ন উপ-কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সংগঠন থেকে বিদায় লগ্নে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বিভিন্ন শাখা কমিটি দেওয়ারও নজির স্থাপন করছে সোহাগ-জাকির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সব নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন সংগঠনের বর্তমানসহ সাবেক নেতারা। এদিকে আসন্ন সম্মেলন ঘিরে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা। অনেকে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সকাল-বিকেল রাতে ধানমণ্ডিতে সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শুরু করে নেতাদের দ্বারে দ্বারে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আর বিশেষ সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের পছন্দের অনুসারীদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তবে বিশেষ বার্তা দিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদগুলোতে যোগ্যতা, মেধা ও জন্মসূত্রে আওয়ামী ঘরের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচনের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলনে নেতা নির্বাচনের বিষয় ২ মে গণভবনে সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের কনফারেন্স যেভাবে হয়, হবে। আমাদের একটা নিয়ম আছে। ইতোমধ্যে কে কে প্রার্থী, তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে এবং ফরম ছাড়া হয়ে গেছে। সবাইকে নিয়ে বসা হয়। সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। সমঝোতা না হলে ভোট হয়। সমঝোতা করে নেতা হবে বা আলোচনা করে হবে- এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আর যদি সমঝোতায় না হয়, তাহলে ভোট হবে। ভোটের আবার কিছু ভালো দিক আছে, মন্দ দিকও আছে। এটাও দেখতে হবে। আমরা চাই, উপযুক্ত নেতৃত্ব ও ছাত্র। বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া আছে। বয়সসীমার মধ্যে যারা সত্যিকারের ছাত্র, যারা মেধাবী, তারা যেন নেতৃত্বে আসে, সেটাই আমরা চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করব।’
এদিকে ছাত্রলীগকে নতুন মডেলে ঢেলে সাজানো হবে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি ২০ এপ্রিল রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিটউট মিলনায়তনে দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সেমিনারে বলেন, ‘ছাত্রলীগকে নিয়ে আমরা নতুন করে ভাবছি। আমাদের ছাত্রলীগের সম্মেলন আছে আপনারা জানেন। সেই সম্মেলনে আমরা নেতৃত্বের গঠনের দিক দিয়ে এবং ছাত্রলীগকে নতুন মডেলে কাজ করার একটা নির্দেশনা নেত্রীর আছে, আমরা সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’ ছাত্রলীগের বিশেষ সিন্ডিকেটের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে আরেকটি সিন্ডিকেটও সক্রিয় আছে। আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে উভয় বলয়ই প্রকাশ্যে-অপপ্রকাশ্যে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত ২৬ জুলাই ২০১৭ সালে বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হয়। গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা ২৭ থাকলেও বিগত তিনটি কমিটির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দুই বছর বাড়িয়ে ২৯ বছর করে দিয়েছিলেন। এবারও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে কয়েকমাস অতিক্রমের ফলে আসন্ন সম্মেলনেও বয়সসীমার বিষয়টি শিথিল হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানায়। সূত্রঃ সারাবাংলা