ভগ্নিপতির ধর্ষণকাণ্ড ধাপাচাপা দেয়ার জন্য নির্যাতিতা ছাত্রী ও তার মাকে ডেকে নিয়ে মারধর এবং মাথা ন্যাড়া করা বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকির নানান অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু এলাকায় নয়; পৌরসভাতে ত্রাস হিসেবে পরিচিত তিনি। স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং বিত্তবান হওয়ায় তিনি কাউকে পাত্তাই দিতেন না। তার বিরুদ্ধে পৌরসভার যে কোনো কাজের বিনিময়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া, মাদক ব্যবসাসহ নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার কারণে এক কাউন্সিলরকে পৌরসভায় আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় রুমকি, তার মা, বাবা, বোন, ভগ্নিপতি ও তাদের সহযোগীরা গ্রেফতার হওয়ায় এলাকা এবং পৌরসভায় স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

শহরের চকসুত্রাপুর ও বাদুড়তলা এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বললে অনেকে রুমকি, ভগ্নিপতি তুফানসহ অন্যদের গ্রেফতারে সন্তোষ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করেন, বেশ কয়েক বছর আগে রুমকি বগুড়া পৌরসভার নগর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পের বাদুড়তলা কুলিপট্টি সিডিসির ক্যাশিয়ার ছিলেন। ওই সময় তিনি শুধু এলাকায় নয়; পৌরসভাতে গিয়েও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করতেন। গত ২০১৫ সালে পৌরসভার নির্বাচনে ভগ্নিপতি ‘তুফান বাহিনীর’ সহায়তায় ২ নম্বর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হন রুমকি। এরপর থেকেই রুমকি বেপরোয়া হয়ে উঠেন।

পৌরসভায় সেবা নিতে আসা জনগণের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নেয়া এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, বগুড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো নাগরিক তার বাড়ি নির্মাণ, সংস্কারসহ অন্যান্য কাজ করলে রুমকিকে বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে কাজ করতে দেন না তিনি। পৌর এলাকায় বিলবোর্ড স্থাপনসহ যে কোনো কাজে তাকে চাঁদা দেয়া বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীরা বলেন, রুমকির কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রেফতার হওয়ায় আমরা খুশি। পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর ও কর্মচারী জানান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম রতনসহ একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে রুমকির অনৈতিক সম্পর্কের কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে।

পুরুষ কাউন্সিলরদের রুমে দরজা বন্ধ করে থাকায় নারী কাউন্সিলররা প্রচণ্ড বিরক্ত তার ওপর। অনেকে সম্মান রক্ষায় রুমকির সঙ্গে কথাও বলেন না। রুমকি থাকলে তার বেলাল্লাপনার জন্য পৌরসভা থেকেও বেরিয়ে যান তারা। এসব কারণে প্রভাবশালী এক কাউন্সিলর রতনকে পৌরসভায় আসতে নিষেধ করা হয়। ফলে কাউন্সিলর রতন পৌরসভায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আসেন না। তবে কাউন্সিলর রতন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রুমকির সঙ্গে তার ভাই-বোনের সম্পর্ক। সন্তানের অসুস্থতার কারণে পৌরসভায় যান না তিনি। রুমকির সঙ্গে তার অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ শত্রুতাবশত এসব বলেছেন বলেও জানান তিনি।

বগুড়া জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ডালিয়া নাসরিন রিক্তা জানান, ‘জনপ্রতিনিধি হবার পরও রুমকি যে বর্বরোচিত কাজ করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।’ তিনি ছাত্রী ধর্ষণ, ধর্ষিতা ও তার মাকে মারধন এবং ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় জড়িত তুফান, রুমকি ও অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এছাড়া ওই পরিবারকে আওয়ামী রাজনীতির বাইরে রাখতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন জেলা যুব মহিলা লীগের এই নেত্রী। সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই এক ছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতন এবং মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে আলোচনায় এসেছেন কাউন্সিলর রুমকি। এ ঘটনার মামলায় রোববার রাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আদালত সোমবার তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn