জগন্নাথপুরের হাওরগুলো অরক্ষিত : বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের মহোৎসব
জগন্নাথপুরের সবক’টি হাওর অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি বাঁধের নির্মাণকাজ। এমনিতইে বাঁধ নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা এর মধ্যে শুক্রবার (১০ মার্চ) রাতে এ উপজেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বছরের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় হওয়ায় ফসল নিয়ে দুঃশ্চিন্তার যেন শেষ নেই কৃষকদের। একদিকে বাঁধের কাজ অসমাপ্ত থাকায় অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় কৃষদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার সরজমিন নলুয়ার হাওর ঘুরে দেখা যায়- শালিকার বাঁধে এখনো কোন মাটি পড়েনি। এছাড়া হালেয়ার পতিত, রাজনগরের পতিত, ডুমাখালি বাঁধের পূর্বে মংলা বাড়ির সামনের ভাঙন ও ভুরাখালি রাখাল গাছের নিকটবর্তী স্থানে মাটির কোন কাজ হয়নি। এর মধ্যে ২০১০ সালে শালিকার বাঁধ ভেঙে পুরো নলুয়ার হাওরের পাকা ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। নলুয়ার হাওরের ভুরাখালির রাখাল গাছ, ডুমাখালি, আমআমি বাঁধে মোটামুটি কাজ ভাল হয়েছে। তবে এখনো বাঁধগুলোর পুরো কাজ শেষ হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির মহোৎসব চলছে।
শালিকার বাঁধ পরিদর্শনকালে কথা হয় হাওরপাড়ের কৃষক নেতা সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন- শালিকার বাঁধ নলুয়ার হাওরের ফসলরক্ষার জন্য সব চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাঁধ ভেঙে বিগত বছরে পুরো হাওরের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়। আমরা খুবই শঙ্কিত এই বাঁধসহ হাওরের অধিকাংশ বাঁধে এখনো মাটি পড়েনি। এসব স্থানে কোন কাজ না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু ব্যক্তিরা বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের চেষ্টা করছেন। তিনি হাওরের ফসল বাঁচাতে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের নিকট।প্রতিটি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) কাজের বিবরণ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড সাঁটানোর কথা থাকলেও সরজমিনে কোন প্রকল্পেই সাইনর্বোড চোখে পড়েনি।
স্থানীয কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানান- এ বছর এ উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার, মইয়া, পিংলাসহ ছোট বড় ১৫টি হাওরে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিনে বোরো ফসলের চাষাবাদ করা হয়েছে। বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে হাওরের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হাওরের কাজ শেষ হয়নি।স্থানী কৃষকরা জানিয়েছেন- নলুয়া হাওরের ফিল্টার-২ এর কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী রানীগঞ্জ- বাগময়না-হলিকোনা সড়কের নলুয়া হাওরের ৪টি পিআইসির কাজ এখনও হয়নি। এর মধ্যে একটি সিআইসিতে সামান্য মাঠির কাজ হলেও অপর তিনটি পিআইসিতে কোন মাটি পড়েনি। পিআইসির সদস্যরা দায়সারভাবে কাজ করলেও ঠিকাদারদের চেহারা এ পর্যন্ত দেখাই যাচ্ছে না। কৃষকরা দাবি করেছেন ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নলুয়ার হাওর পাড়ের ভূরাখালি গ্রামের কৃষক আব্দুস সবুর বলেন- আর কয়েকদিন পর ফসল ঘরে তোলার ধূম পড়বে। কিন্তু হাওরের বাঁধগুলোর কাজ এখনও শেষ না-হওয়ায় আমরা দুঃশ্চিতায় আছি। গত বছর শিলা বৃষ্টির কারণে ১২ কেদার জমির সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এ বছর যদি ফসল গোলায় না-তুলতে পারি তাহলে না-খেয়েই হয়ত মরতে হবে।
একই গ্রামের আরেক কৃষক এনামুল হক বলেন- তিনিও গত বছর ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। জমিনের সব পাকা ফসল শিলাবৃষ্টিতে বিনষ্ট হয়ে যায়। এ বছর তিনি ২০ কেদারা জমিনে আবাদ করেছেন। কিন্তু বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন না-হওয়ায় শংকিত পড়ে পড়েছেন তিনি। তাদের দাবি দ্রুত বাঁধগুলো নির্মাণকাজ শেষ করে হাওরের ফসল রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বেরিবাঁধের কাজ সঠিকভাবে না-হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন- হাওরের বেড়িবাঁধের কাজ মন্ত্ররগতিতে চলছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ সূত্র জানায়- চলতি মৌসুমে জগন্নাথপুর উপজেলার ৩৩টি পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) অনুকুলে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, দুই জন ঠিকাদারের মাধ্যমে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর অঞ্চলের মাঠ কর্মকর্তা (এসও) মোসোদ্দেক আহমদ জানান- অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- এবার বরাদ্দ অপ্রতুল থাকায় কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। তিনি হাওরের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করে বলেন- অপর ৩০ ভাগ কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে।