জগন্নাথপুরে অধিকাংশ বেড়িবাঁধের কাজ এখনও শুরু হয়নি
মোঃ সানোয়ার হাসান সুনু :: পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও খামখেয়ালীপনার কারণে উপজেলার নলুয়া ও মই হাওরের অধিকাংশ বেড়িবাঁধে এখনও কাজই শুরু হয়নি। গেল বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রয়ারী ২০১৮ এর মধ্যে ৬৮ কিলোমিটার হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মানে সরকার ৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলেও পাউবো কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে অধিকাংশ পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) কমিটিকে এখনও কার্যাদেশ প্রদান না করায় অধিকাংশ বেড়িবাঁধের স্থানগুলোতে মাটি ফেলা হয়নি। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। জগন্নাথপুরে ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের ৭২টি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) পিআইসি এখনো নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পাননি। উপজেলার ৮৫টি পিআইসির মধ্যে ১৩টি পিআইসিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়ছে। যেসব পিআইসি বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ পাননি তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ পিআইসি এ প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে যদি কার্যাদেশ প্রদান করা না হয় তাহলে পিআইসি কমিটি থেকে অব্যাহতি নেবেন তারা।
জানা যায়, গত বছরের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নিার্মত নিম্নমানের বেরী বাঁধ ভেঙে জগন্নাথপুরের সবক’টি হাওরের আধাপাকা ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে নানা কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে কৃষকদের। এবার বোরো ফসল চাষাবাদের শুরুতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়েন কৃষকরা। হাওর থেকে দেরিতে পানি নামায় শুরু থেইে বোরো আবাদ ব্যাহত হতে থাকে। এর সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও কৃষকরা থেমে নেই। বুকে সাহস নিয়ে হাওরে নেমেছেন চাষাবাদে। এবছর জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া হাওরসহ উপজেলার ৮৫টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। ৮৫টি পিআইসি’র মধ্যে মাত্র ১৩টি পিআইসি’র কার্যাদেশ পাওয়ায় ওই সব প্রকল্পে নামমাত্র কাজ শুরু করেছে। অপর দিকে ৭২টি পিআইসি এখনো বাঁধ নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায়নি। যে কারণে বেড়িবাঁধের কাজও শুরু করতে পারেনি ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। ফলে সরকারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত সঠিক মানের বেরীবাধ নির্মান নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন স্থানীয় কৃষক সমাজ। জগন্নাথপুরের প্রধান নলুয়া হাওরের বেতাউকা বেড়িবাঁধের পিআইসি’র সভাপতি চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়া বলেন, বাঁধ নির্মাণের সঠিক সময় হচ্ছে এখন। কিন্তু কার্যাদেশ না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারছি না।’ তিনি বলেন,‘এ সপ্তাহের মধ্যে যদি কার্যাদেশ না পাওয়া যায়, তাহলে পিআইসি থেকে অব্যাহতি নেব। কারণ অসময়ে কাজ করা মানে নিজের বিপদ তৈরি করা।’আরেক পিআইসি’র সভাপতি রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নাজমুল হোসেন বলেন,‘বার বার সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে আসছি বাঁধের কার্যাদেশ প্রদানের জন্য। তারপরও কোন সুফল পাচ্ছি না। এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যাদেশ না পাওয়া গেলে তিনিও পিআইসি থেকে অব্যাহতি নেবেন বলে জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর আঞ্চলিত অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোর বেড়িবাঁধের কাজের দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফয়জুল্লাহ বলেন, দ্রুত কার্যাদেশ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি এ সপ্তাহে কার্যাদেশ পাওয়া যাবে।’ জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি বার বার লিখিতভাবে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি কার্যাদেশ প্রদানের জন্য। এই মুহুর্ত্বে যদি কাজ শুরু করা না যায় তাহলে বিঘ্নিত হতে পারে বেড়িবাঁধের কার্যক্রম। জানাগেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধগুলোর সঠিক জরিপ ও প্রাক্কলন ব্যয় মূল্যায়ন করা হয় নি। উপযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মানে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাদের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টি স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মাঠ পর্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কাউকে দেখা যাচ্ছেনা বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।