জগন্নাথপুরে এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনাটি ঘটেছে জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নে। তবে এ ঘটনাকে ঘিরে ভিন্নমতও দেখা যায় স্থানীয়দের মধ্যে। বুধবার (৭ মার্চ) বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হাসিমকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। জানা যায়, ভিজিডির কার্ডে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছিল ২৫ কেজি করে। তা দেখে একজন ইউপি সদস্য অভিযোগ করলে তা আমলে নেননি চেয়ারম্যান। তখনই শুরু হয় বিক্ষোভ। বিক্ষোভে অংশ নেন নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ হাজারো জনতা। বিক্ষুব্ধরা চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয় উপস্থিত জনতা। ওই ঘটনাস্থলে থাকা ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন সাজাদ জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে জনপ্রতি ৫ কেজি করে চাল কম দেওয়া হচ্ছিল। এ সময় আমরা তার প্রতিবাদ করি। কিন্তু চেয়ারম্যান তা মানেন নি। পরে আমরা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করি। তবে তাৎক্ষনিক বিষয়টি সমাধানের লক্ষে কয়েকজন ইউপি সদস্য ও মহিলা সদস্য বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তাতেও কোন সমাধান হয়নি।

পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। কয়েক ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা করার পর পরিস্থিতি শান্ত না হলে রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ। তখন তিনি বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে ওই চেয়ারম্যানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তাঁকে থানায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, এ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এদিকে বিক্ষুব্ধদের কয়েকজনের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, চেয়ারম্যান সবসময় নিজেকেই সব কিছু মনে করেন। কথায় কথায় রাগ দেখান। বিভিন্ন সময় তিনি জনগণকে বন্দুকের ভয়ভীতি দেখান। আমরা অতিষ্ঠ হয়ে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া কলকলিয়া বাজার সেক্রেটারি হারুন মিয়া জানান, ইউএনও স্যারের আশ্বাসে আমরা কোন কর্মসূচি দিচ্ছি না। কলকলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা রাজেস দেব নাথ জানান, কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একজন দুর্নীতিবাজ লোক। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে তিনি সব সময় মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করেন।

অপরদিকে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি কলকলিয়া ইউপির সাদিপুর গ্রামে একটি প্রভাবশালী মহল বসন্ত মেলার নামে অশ্লীল যাত্রানুষ্ঠান আয়োজন করে। এলাকাবাসীর প্রতিবাদে তা ভেঙ্গে দেয় প্রশাসন। এ প্রতিবাদে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। অনেকেই বলছেন ওই কুচক্রী মহল চেয়ারম্যানের সম্মানে আঘাত আনার জন্য এ চক্রান্ত করেছে। স্থানীয় শাহীনুর রহমান শাহীন নামে এক যুবক বলেন, চেয়ারম্যান একজন ভালো মানুষ। কলকলিয়ার শান্তশিষ্ট মানুষকে অশান্ত করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রভাবশালী মহল এ ধরনের কাজ করছে। অপর আরেকজন বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তির চক্রান্তে শিকার আমাদের চেয়ারম্যান।
 এ ব্যাপারে কলকলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাসিম বলেন, আমি সব সময় উন্নয়ন ও জনগণের পক্ষে। এ ঘটনাটি ষড়যন্ত্র। কিছু দিন আগে ইউনিয়নবাসীকে নিয়ে একটি অশ্লীল যাত্রানুষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তা প্রতিহত করেছি। আর এই যাত্রানুষ্ঠানে আয়োজকরাই আমার বিরুদ্ধে জনগণকে ফুসলিয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn