জাতীয় শোক পালন নিয়ে জেলা আ’লীগ সভাপতি সম্পাদক মুখোমুখি
জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিবস পালন নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার এম এনামুল কবীর ইমন প্রতিবারের মতো এবারো দুই শিবিরে অবস্থান নিলেন। ১০ আগষ্ট ব্যারিষ্টার ইমন শহরের উকিলপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করা নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেন। দু’দিন পর শনিবার ১২ আগষ্ট রমিজ বিপনী কার্যালয়ে সভাপতি মতিউর রহমান পাল্টা সভা করে দলের জেলা সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার ইমনের সভাকে অবৈধ বলে ঘোষনা দেন। তিনি বলেন,‘আমার অনুমতি ছাড়া কোন সভাই জেলা আ.লীগের দলীয় সভা নয়। তিনি ব্যারিষ্টার ইমনকে ইঙ্গিত করে বলেন,নব্য আওয়ামী লীগার তার ব্যক্তিগত সভাকে আওয়ামী লীগের সভা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সে রমিজ বিপণিতে আওয়ামী লীগের মূল দলীয় কার্যালয়ে আসেনা। সে তার নিজের অফিসে গুটি কয়েকজন বন্ধু নিয়ে সভা করে। এইসব সভা কোনোভাবেই দলীয় সভা নয়।
স্থানীয় একটি দৈনিকের বরাত দিয়ে ব্যারিষ্টার ইমনের কাছে দলের জেলা সভাপতির এ ধরনের বক্তব্যের ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানতে ‘সুনামগঞ্জ বার্তা ‘ অনলাইনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সভাপতি কি বলেছেন সে ব্যাপারে তিনি ভালো বলতে পারেন। তবে তিনি যে সব অভিযোগ করেছেন সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমি আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বলতে পারি। আমাকে যদি তিনি নব্য আওয়ামী লীগার বলে থাকেন তাহলে আমি বলবো তিনি যা বলেছেন তা ঠিকই বলেছেন। আওয়ামী লীগে আমি নতুন হতে পারি। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী জন্মগত। ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে আমি আওয়ামীলীগার হয়েছি। উনি কি ছিলেন সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাইনা দলীয় নেতা কর্মী সব জানে এবং তারাই বিচার করবেন। ব্যারিষ্টার ইমন বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় চাচা। আমার লিডার। দলের জেলা সভাপতি বলেছেন, আমি রমিজ বিপণির আওয়ামী লীগের মূল দলীয় কার্যালয়ে যাই না। রমিজ বিপণিতে দলের মূল কার্যালয় কি ভাবে হলো? প্রশ্ন করে ইমন বলেন, রমিজ বিপণির তথাকথিত কার্যালয় হচ্ছে জনৈক ব্যক্তি কতৃক জোরজবরদস্থি মূলক বে-আইনী দখলকৃত সম্পত্তি। বে- আইনী দখলকৃত সম্পত্তি কখনোও আমাদের দলের অনিমোদিত কার্যালয় হতে পারেনা। উকিল পাড়ায় কার্যালয় আমরা ভাড়া পরিশোধ করে বহুদিন ধরে দলীয় কর্মকান্ড চালিয়ে আসছি। জেলা সভাপতি নিজে তা উদ্বোধন করেছেন। জেলা যুবলীগের কার্যালয় থেকে পরে তা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে পরিবর্তন করা হয়। ব্যারিষ্টার ইমন বলেন বরঞ্চ আমরা তাকে প্রশ্ন করতে পারি তিনি কেন দলীয় কর্যালয়ে আসননা?
জেলা সভাপতি আরো বলেছেন, আমি নিজের অফিসে গুটি কয়েকজন বন্ধু নিয়ে সভা করি। অ্যাড. হায়দার চৌধুরী লিটন, সুবীর তালুকদার বাপ্টু, করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, মোবারক হোসেন, দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, রেজাউল আলম নিক্কু, জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক অ্যাড. আসাদুল্লাহ্ সরকার, জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক সেলিম আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা ঈশতিয়াক শামীম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মলয় চক্রবর্তী রাজু, আওয়ামী লীগ নেতা সহকারী অধ্যাপক শাহ্ আবু নাসের, অভিজিৎ চৌধুরী, অরুণ চন্দ্র দেব, অ্যাড. নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল প্রমুখ এরা কি আমার বন্ধুবান্ধব? এদের অনেকেই অঙ্গসংগঠনের নেতা। অনেকে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের পদ পদবীদারী।
জেলা সভাপতির এ ধরনের বক্তব্যকে আত্মঘাতি উল্লেখ করে ব্যারিষ্টার ইমন বলেন, দলের ক্ষতি কে করছে? কে দলে অনৈক্য সৃষ্টিতে দায়ি বুঝার বাকী থাকেনা। কে দলীয় নেত্রীর স্বীদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে সাংসদ জয়া সেনের নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করেছেন? কে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলের মনোনীত পার্থীর বিরোধিতা করেছেন? সব আমলনামা দলীয় প্রধানের কাছে আছে। আমি উনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই উনার বয়স হয়েছে। কখন কি বলেন ঠিক নেই। আমিও তাই এতো কিছু মনে করিনা।
দুই জনের কমিটি দিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ আর কতো দিন চলবে? ‘এর মধ্যে আবার দু’জনের দুই অফিস। সুনামগঞ্জ বার্তা’ অনলাইন এর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তরে ব্যারিষ্টার ইমন বলেন, আমাদেরকে( সভাপতি-সম্পাদক) কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছিল দু’জনের পছন্দের তালিকা দিতে। সভাপতির দেয়া তালিকা কেন্দ্র থেকে ফেরত দেয়া হয়েছে সবাই তা জানে। কেন দেয়া হয়েছে? তাও দলের নেতাকর্মীদের জানা। আমি যতটুক জানি উনি সংশোধিত তালিকা এখনো ফেরত দেননি। কমটি হতে কেন বিলম্ভ হচ্ছে? সহজেই অনুমেয়। আমার পক্ষ থেকে কোন ভাবেই চেষ্টার ত্রুটি হচ্ছ না।
উল্লেখ্য যে, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সম্পাদক পৃথক পৃথক ভাবে নিজ বলয়ের নেতাকর্মী নিয়ে এবারও জাতীয় শোক দিবস পালন করবেন বলে ইতিমধ্যে স্বীদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যারিষ্টার ইমন বলেছেন, প্রথমে আবুল হোসেন মিলনায়তন(বিডি) হলে শোক দিবসের আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হলেও অনিবার্য কারনে পরে তা উকিলপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে করার স্বীদ্ধান্ত নেয়া হয়।