করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকার ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১০ মে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের জন্য অনুদান গ্রহণের সময় দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে কিছু (সেক্টর) পুনরায় খুলে দেয়ার চেষ্টা করছি। যাতে লোকেরা পবিত্র রমজানে কিছু জীবিকা অর্জন করতে পারে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশের ৫৫টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্রদের সহায়তায় রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি মানুষের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমরা তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ এ সংকটকালে বিপুল ধান ঘরে তোলা কৃষকদের দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু ধানের (এ মৌসুমের) প্রায় ফসল ঘরে তোলা হয়েছে, তাই মানুষের খুব বেশি (খাদ্যের ঘাটতির কারণে) অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা দৈনিক কাজের ওপর নির্ভরশীল তারা তাদের কাজ হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে। যদিও আমরা সহায়তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, তারপরও তাদের পক্ষে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এসব অনুদান গ্রহণ করেন। সংগঠনের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের কাছে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। এ সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তহবিলের জন্য ৫০ হাজার সার্জিকাল মাস্ক সরবরাহ করে। অনুদান প্রদান করা ৫৫টি সংস্থার মধ্যে রয়েছে- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর), শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (নেত্রকোনা), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, নগদ (রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক পরিষেবা), বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কনস্ট্যাবুলারি (এমওডিসি), পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, জীবন বিমা করপোরেশন, সাধরণ বিমা করপোরেশন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ বীমা সমিতি।

এ ছাড়া আরো অনুদান প্রদান করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বিসিএস কৃষি সমিতি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স সমিতি, পোল্ট্রি সমিতি, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পরিষদ, সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সমিতি, বঙ্গবন্ধু পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সমিতি, বাংলাদেশ চা সমিতি, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব লিমিটেড, বুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ নিবন্ধীকরণ সেবা সমিতি, থার্মাক্স গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং পূর্বাচল ক্লাব লিমিটেড। এসব সংস্থার পাশাপাশি মোস্তাসিম বিল্লাহ সিয়াম নামে একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অর্থ অনুদান করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn