ঝালকাঠির রাজাপুরে জুয়া খেলতে বাধা দেয়ায় জুয়াড়ি মাদকাসক্ত ছেলের পিটুনিতে বাবা ইসমাইল আকনের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মা রোকেয়া বেগমও আহত হয়ে বরিশাল শেবাচিমে চিকিৎসাধীন। পুলিশ ঘাতক ছেলে মাহফুজ আকনকে আটক করেছে। সোমবার (১১ মে) সকালে বরিশাল শেবাচিমে চিকিৎসধাীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পুলিশ মৃত্যুর খবর পেয়ে তার ছেলেকে আটক করেছে। রবিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের মধ্য কাঠিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত আব্দুল হামিদ আকনের ছেলে নিহত ইসমাইল আকন ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকুরি করতেন। তিনি করোনার ছুটিতে সম্প্রতি বাড়িতে এসেছিলেন। রাজাপুর থানার ওসি আবুল কালাম জানান, ছেলে মাহফুজ আকন জুয়ারি ও মাদকাসক্ত ছেলেকে রক্ষার জন্য মা ও বাবা জুয়া খেলতে নিষেধ করেন এবং ঘর থেকে জুয়ার কোড ও গুটি ফেলে দেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে ছেলে মাহফুজ জুয়া খেলার জন্য জুয়ার কোড ও গুটি নিতে ঘরে আসলে বাবা-মা দুজনেই ছেলেকে বাধা দেয় ও জুয়া খেলার সরঞ্জাম ঘরের বাইরে ফেলে দেয়ার কথা জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা-মা দুজনকেই দরজার লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে।
পরে স্থানীয়রা আহত বাবা-মাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে বাবা ইসমাইল আকনের মৃত্যু হয়। আটক ঘাতক মাহফুজ কাউখালির কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের বিএম শাখার ১ম বর্ষের ছাত্র। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত ইসমাইল আকনের ছোট শুক্তাগড় মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আল আমিন আকন ও স্থানীয়রা জানান, লোকজন নিয়ে মাহফুজ জুয়া লেখতো। কোড ও গুটি বাসায় এনে রাখতো। বাবা বাড়িতে আসার পর বহু বার দিনে ও রাতে বাসার বাহিরে বাহিরে থাকতে বারণ করতো কিন্তু মাহফুজ শোনতো না। নিরুপায় হয়ে ঘটনার দিন মাহফুজ বাহিরে থাকার সময় বাবা ইসলামাইল জুয়ার কোড ও গুটি ঘর থেকে খুঁজে বের করে বাহিরে ফেলে দেয়। পরে মাহফুজ রাতে বাসায় এসে গুডি ও কোড খুঁজতে থাকে এবং বাবা মাকে জানতে চায় কোড আর গুটি কই। এর পর বাবা ইসমাইল আকন ছেলে মাহফুজকে জানান আর জুয়া খেলা যাবে না এসব বাদ দিতে হবে। কোড ও জুয়ার গুটি ফেলে দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনেই বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ের ঘরের দরজার তাল গাছের লাঠি দিয়ে বাবাকে পিটুনি শুরু করলে তাকে রক্ষার জন্য মা এগিয়ে এলে তাকে বেদম মারধর করে জখম করে। তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের আশপাশের লোকজন এসে তাদের অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে মাহফুজের মা আহত রোকেয়া বেগম (৩৮) বরিশাল শেবাচিমে ভর্তি। তিনিও শঙ্কামুক্ত নয়। মাহফুজ প্রতিদিন রাত ৮ টার দিকে বাসা থেকে জুয়ার কোড ও গুটি নিয়ে ওই এলাকার কোন এক নির্জন বাগানে অন্য জুয়ারিদের নিয়ে মাদক সেবন ও জুয়ার আসর চালাতো এবং গভীর রাত বা শেষে রাতে বাসায় ফিরতো।

সম্প্রতি প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ৪ জুয়ারিকে কারাদণ্ড দেয়ায় ছেলেকে রক্ষার জন্য পিতা জুয়ার কোড ও গুটি ফেলে দেয় এবং তাকে জুয়া খেলতে নিষেধ করেছিলো। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাসে সবাই যখন প্রশাসনসহ সকলে ব্যস্ত ও ঘরে থাকার সুযোগে মাহফুজ যে চক্রটির সাথে মাদক সেবন ও জুয়ার আসরে বসতো, তারা বেপরোয়া হয়ে গেছিলো। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একটি জুয়ারি ও মাদক চক্র এলাকার যুব সমাজকে জুয়া ও মাদকে আসক্ত করে আসছে। দ্রুত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতার দাবিও জানান স্থানীয়রা। রাজাপুর থানার ওসি আবুল কালাম জানান, হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজন কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn