জেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হওয়া যে গ্রামগুলোতে এখনো পর্যন্ত সহায়তা পৌঁছেনি সেখানেই যেতে চাইলেন জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের উকিলপাড়ার রিভারভিউ থেকে নৌপথেই রওয়ানা করলেন। কোনো ঢাক-ঢোল পেটানো কর্মসূচি নয়। জেলা প্রশাসক একাই যেতে চাইলেন। সঙ্গে কেবল নিজের দেহরক্ষী মোশাহিদ আহমদ আর সিএ পিন্টু চন্দ্র দাসকে নিলেন। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকায় থাকা আরো একজন তার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন। স্পিডবোটযোগে জেলার বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন জেলা প্রশাসক। তবে এ যাত্রা উপজেলা সদর কেন্দ্রিক নয়। এ দুই উপজেলার দুর্গম গ্রামগুলোতে যাওয়া এবং সেখানকার পানিবন্দী মানুষের মাঝে সহায়তা পৌঁছে দেয়াই ছিল জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্য। তাই নির্দেশনা অনুযায়ী যেখানেই বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গ্রাম চোখে পড়েছে সেদিকেই স্পিডবোট ভিড়িয়েছেন চালক। এসময় জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার পক্ষ থেকে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়। জেলা প্রশাসক এসময় বিচ্ছিন্ন এসব গ্রামের মানুষের খোঁজ-খবর নেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই এবং সে অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন সবসময় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় পাশে আছে। ঢলের পানিতে যেসব এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাশে বিত্তশালীদের সকলকেই নিজেদের বিবেকবোধ থেকে এগিয়ে আসা উচিত। আপনাদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় আমরা তা গুরুত্ব দিয়েই করছি। যে কোন দুর্যোগে ভয় পেলে চলবে না। আপনারা সাহস হারাবেন না, আমরা পাশে আছি।’
বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফুলভরি গ্রামে ও বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি। এসব ত্রাণ সহায়তার মধ্যে ছিল চিড়া, গুড়, মুড়ি, মোমবাতি, ম্যাচ, ওরস্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট।
ফতেপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা রতন দাস বলেন, ‘অনেকেই আসেন, কিন্তু তারা আমাদের মতো অবহেলিত গ্রামের মানুষের কাছে আসেন না। তারা উপজেলা সদরে ঘুরে কিছু ছবি তোলে চলে যান। এই প্রথম জেলা প্রশাসক আমাদের কাছে নিজে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি আমাদের দুর্দিনে আমাদের কাছে এসেছেন, সহায়তা দিয়েছেন, আমরা খুব খুশি।’এলাকার নরেশ দাস বলেন, ‘আমরা ডিসি স্যারকে এমনভাবে পাবো সেটা কখনো ভাবিনি। তিনি হঠাৎ করেই আমাদের বিপদের দিনে একেবারে ঘরে এসে উপস্থিত হলেন। আমাদেরকে তিনি যে সহযোগিতা করলেন তা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’রতন দাস ও নরেশ দাশের মতো ফুলভরি গ্রামের এবং উমেদনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম, আছির আলী, রুহেল মিয়া, আশিক, আব্দুল হান্নানও জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগে খুশি।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn