সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে প্লাস্টিকের চাঁইয়ের অবাধ ব্যবহারে হুমকিতে পরেছে দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরের মৎস্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র‍্য। প্রশাসনের দায়সারা কার্যক্রমে গত দশ বছর ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ উপজেলার ছোট-বড় সবকটি হাওরে চিংড়ি মাছধরার জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের চাঁইয়ের অবাধ ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে চরম হুমকির মুখে রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সবকটি হাওর। এছাড়াও মানব সৃষ্ট বিভিন্ন দূষণে হুমকির মুখে পড়েছে এই হাওরটি।

উপজেলার সচেতন মহল বলছেন, প্লাস্টিকের চাঁইয়ের ব্যবহার রোধ না করা গেলে টাঙ্গুয়ার হাওর সহ অন্যান্য হাওরগুলোর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র‍্য আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে। এগুলো ব্যবহার রোধে হাওরবাসীকে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী।

জানা যায়,তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরসহ মাটিয়ান হাওর, বনুয়ার হাওর ঘুরে ও জেলার তাহিরপুর উপজেলার লামাগাও, মানিকখিলা, রামসিংহপুর, জয়পুর গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, ইন্দ্রপুর, বিনোদপুর, পানিয়াখালী, তেরঘর, কলাগাও, নবাবপুর, জামালপুর, শিবরামপুর, বেতাগড়া ও ধর্মপাশা উপজেলার রুপনগর, বাকাতলা, ইছামারী, আমতরপুর, রাজেন্দ্রপুর, রংচি, আমানীপুর, নিশ্চিন্তপুর, বংশীকুন্ডা, সানোয়া, কাউহানী, খিদিরপুর, হাতপাটন গ্রামে জেলেরা হাওরগুলো থেকে প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহার করছেন মাছ শিকারিরা। এই চাই দিয়ে খুব সহজে বেশি পরিমাণ চিংড়িসহ ছোট মাছ শিকার করার জন্য প্রতিদিনেই হাওরজুড়ে এবং শুকনো মৌসুমে হাওরের বিল, নদী-নালায় পানির নিচে সারিবদ্ধভাবে সুতা দিয়ে বেধে ময়দার টোপ দিয়ে প্লাস্টিকের চাঁই রেখে দেওয়া হয়। সকালে এসব চাঁই তুলে এর ভিতর থেকে চিংড়ি ও ছোট মাছ বের করে সেগুলো এমনি আবারও বফেলে রেখে দেওয়া। আর এক সময় চাঁই গুলো নষ্ট হয়ে গেলে জেলেরা একেই ভাবে পানিতে ফেলে দেন। আর একারণে হাওরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটে রয়েছে প্লাস্টিকের চাঁই।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা মাহমুদ মিয়া, বকুল মিয়া, সালাম মিয়াসহ অনেকেই জানান, চাঁইগুলো প্লাস্টিকের হওয়ায় এগুলো পচনশীল নয়। এসব অপচনশীল চাঁই মাছ ধরার জন্য অবাধেই ব্যবহার করে এসব প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহারের পর জেলেরা হাওরেই যত্রতত্র ফেলে রেখে দেন। এতে করে হাওরের জলচর প্রাণীসহ মাছের জন্যও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের গোলাবাড়ি, ছিলানী তাহিরপুর, ইন্দ্রপুরী গ্রামের কয়েকজন জেলে বলেন, টাংগুয়ার হাওরে চিংড়ি মাছ ধরার চাঁইগুলো দেখতে গোলাকার বৈশিষ্ট্যের হয়। প্লাস্টিক মুড়িয়ে বাঁশের কঞ্চি ও তার দিয়ে এই চাঁই তৈরি করা হয়। ৭-৮বছর পূর্বে শুধুমাত্র বাঁশের তৈরি চাঁই দিয়েই চিংড়ি মাছ ধরা হত। এরপর থেকে একাধিক বার ব্যবহার ও কম খরচে তৈরি করা প্লাস্টিকের চাঁই এখন স্থানীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুব সহজে বেশি পরিমাণ চিংড়িসহ ছোট মাছ শিকার করায় বর্তমানে পুরো হাওর এলাকায় এই চাঁই ব্যাপক হারে ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক পরিবেশবাদী এনামুল কবীর বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক ব্যবহারের পর যদি হাওরে যত্রতত্র ফেলে রাখে তাহলে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র‍্য চরম হুমকির মুখে পড়বে। প্লাস্টিক অপচনশীল,আর এসব প্লাস্টিক দিয়ে মাছ ধরার চাঁই পানির নিচে ও জলাশয়ে ফেলে রাখলে মাছসহ জলচর বিভিন্ন প্রাণীর জন্য চরম ক্ষতিকর। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র‍্য এবং মৎস্য সম্পদ রক্ষায় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এর সাথে জড়িত বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn