ডিসেম্বর ‘টার্গেট’ সিলেট বিএনপি’র
সিলেট জেলা বিএনপিকে গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে আহ্বায়ক কমিটি। হাতে নিয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনাও। এই পরিকল্পনার মধ্যে দল গোছানোর পাশাপাশি চলমান সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। এক্ষেত্রে দলের তৃণমূলের দ্বন্দ্ব দূর করতে কাজ শুরু করেছে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন- বড় দল হওয়ার কারণে সিলেট বিএনপি’র চলমান গোছানোর প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। এই ক্ষোভ কমিয়ে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসাই হচ্ছে জেলা বিএনপি’র চ্যালেঞ্জ। এতে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার ও তার কমিটি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে সেটি দেখার অপেক্ষায় সবাই। সিলেট জেলা বিএনপির কমিটি হঠাৎ করেই ভেঙে দেয়া হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে হাই কমান্ডের নির্দেশে পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় ১৩ বছর ধরে ক্ষমতার ধারে কাছেও নেই বিএনপি। এ কারণে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খুঁজে বের করা কষ্টকর। সিনিয়র কাউকে না পেয়ে শেষ মুহূর্তে জেলা বিএনপির সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করা হয়। গত বছরের ৩রা অক্টোবর আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর কথা ছিল স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তারা জেলার সম্মেলন করবে। কিন্তু করোনার প্রারম্ভিক পর্যায় মার্চ পর্যন্ত তারা সেটি করতে পারেনি। বরং উপজেলা ও পৌরসভার ১৮টি ইউনিট গঠন নিয়ে খোদ আহ্বায়ক কমিটিতেই বিরোধ দেখা দেয়। দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে বিরোধ আপাতত শান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঘোষিত ১৮টি ইউনিট কমিটি নিয়েও মনোমানিল্য দেখা দেয়। পরে কেন্দ্রের নির্দেশে বর্ধিত কলেবরে ওই আহ্বায়ক কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হয়। এখন ইউনিটগুলোতে ক্ষোভ কিছুটা কম। এরই মধ্যে নতুন টাইমফ্রেম নিয়ে মাঠে নেমেছে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। তারা জানিয়েছেন- ১৮টি ইউনিটকে ইতিমধ্যে একটি টাইমফ্রেম দিয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। এই টাইমফ্রেম হচ্ছে নভেম্বর। এর মধ্যে প্রতিটি ইউনিটকে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। উপজেলা বা পৌর বিএনপির সম্মেলনের আগে তাদের দু’টি কাজ করতে হচ্ছে। একটি হচ্ছে, প্রতিটি ইউনিয়ন বিএনপির মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির কমিটি সম্মেলন করে গঠন করতে হবে। এরপর ইউনিয়ন কিংবা পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটিগুলোকে গঠন করতে হবে। এসব কাজ দ্রুততম সময়ে সমাপ্ত করার পর নভেম্বরের মধ্যে উপজেলা ও পৌর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। সে কারণে আহ্বায়ক কমিটির নেতাদেরও মনিটরিং করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলনের সম্ভাব্য সময় ডিসেম্বরে রাখা হয়েছে। নভেম্বরে ১৮টি ইউনিট পূর্ণাঙ্গ করা হলে জেলার সম্মেলন ও কমিটি এক মাসের মধ্যে করা হবে। এবারো সিলেট জেলা বিএনপি সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে চায়। এতে দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা হয় বলে জানিয়েছেন নেতারা। সাবেক কমিটিও একইভাবে সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল। আর কাউন্সিল প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন করে চমক দেখিয়েছিলো সিলেট বিএনপি। ওই কমিটিও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দেয়া হয়। ফলে সাংগঠনিক ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় চলছিল সিলেট বিএনপি। বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানিয়েছেন- ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এবারো আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা সব কিছু বদলে দিয়েছে। করোনাকালে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হলে তারা ১৮টি শাখা কমিটি পুনর্গঠন করেন। এখন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন ও কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে নির্বাচনেও অংশ নেয়া হচ্ছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও ওসমানীনগরে দু’টি ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে। আগামী ডিসেম্বরে সিলেটের যেসব পৌরসভা নির্বাচন হবে সেগুলোতেও বিএনপি অংশ নেবে। তিনি বলেন, দল গোছানো ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ দু’টোই একসঙ্গে চলবে। এতে সিলেট জেলা বিএনপির কোনো সমস্যা হবে না। সিলেট বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন- এবার ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অনেক এগিয়ে সিলেট বিএনপি। এতে করে সাংগঠনিক গতি বেড়েছে। আগামীতেও বিএনপি একই ধারা বজায় রাখবে। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল আহাদ খান জামাল জানিয়েছেন- ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ থাকবে। এখন বিএনপি সরাসরি ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন করবে। এতে কোথাও কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন নেতারা। এই বাধা ডিঙ্গিয়ে বিএনপিকে গোছানো হচ্ছে। মূল দল বিএনপির মতো এবার যুবদল ও ছাত্রদল তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়িয়েছে। যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের নেতারা কয়েকদিন ধরে সিলেটের বিভিন্ন থানা, পৌর ও উপজেলা পর্যায়ে সভা করছে। সিলেট থেকে ছাত্রদল সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠন চাচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তারা দল গোছানোর কাজ শেষ করে ফেলবে। এরপর তারা স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও আন্দোলনে নামবে।