ঢাকাকে হারিয়ে দিলো রাজশাহী
ঢাকা পর্বের প্রথম অংশে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারানোর মতো দল পাওয়া যায়নি একটিও। চারটি ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই সহজ জয় পেয়েছিল শক্তিশালী ঢাকা। অবশেষে সিলেটে গিয়ে তাদের হারিয়ে দিলো মেহেদি হাসান মিরাজের রাজশাহী কিংস। আসরে নিজের প্রথম ম্যাচেই একে ওপরের মুখোমুখি হয়েছিল দল দুইটি। সে ম্যাচে ঢাকার করা ১৮৯ রানের জবাবে রাজশাহী অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১০৬ রানে। ঢাকার বিপক্ষে দ্বিতীয় দেখায় নিজেদের এতো অল্প রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার প্রতিশোধটা বেশ ভালোভাবেই নিয়েছে রাজশাহী। ব্যাটসম্যানদের শেষদিকের ব্যর্থতায় স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৩৬ রান পেয়েছিল কিংসরা। তবে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জয় পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাদের। ঢাকাকে মাত্র ১১৬ রানে থামিয়ে ২০ রানের সহজ জয়েই নিজেদের সিলেট পর্ব শেষ করলো মিরাজের রাজশাহী। ১৩৭ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ১১ রান করে ফেলেন ঢাকার দুই ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই এবং সুনিল নারিন। নিজেদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দ্রুতই ম্যাচ শেষ করে ফেলবেন এ দুজন- এমনটাই আশা ছিলো ঢাকার সমর্থকদের। কিন্তু ভিন্ন চিন্তাই ছিলো রাজশাহীর অধিনায়ক মিরাজের। দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরিয়ে দেন নারিনকে। অধিনায়কের পরের ওভারেই আঘাত হানেন লঙ্কান ইসুরু উদানা, ফিরিয়ে দেন জাজাইকে। নারিন ৬ এবং জাজাই করেন ১ রান। পরের ওভারেই আক্রমণে আসেন রাজশাহীর জয়ের নায়ক আরাফাত সানি। প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন ভয়ঙ্কর আন্দ্রে রাসেলকে। ক্যারিবিয়ান এ অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। চতুর্থ উইকেটে ২৬ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং রনি তালুকদার।
মনে হচ্ছিলো দুজন মিলে ধীরে ধীরে জয়ের কাছে নিয়ে দলকে। তখনই আবার বাঁধ সাধেন সানি। অধিনায়ক সাকিবকে ফেরান ক্রিশ্চিয়ান জঙ্কারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে। নিজের পরের ওভারে রনি তালুকদারের উইকেটসহ মেইডেন তুলে নেন সানি। চার ওভার শেষে সানির বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৪-১-৮-৩। তখনো ঢাকার আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন ক্যারিবিয়ান দানব কিয়েরন পোলার্ড। মোহাম্মদ নাঈম শেখকে নিয়ে তিনি ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৩১ রান। সে জুটি ভেঙে রাজশাহীর জয়ের আশা বাড়িয়ে দেন অধিনায়ক মিরাজ। নাইম করেন ১৭ রান। পরের ওভারেই রায়ান টেন ডেসকাটে এবং সৌম্য সরকার মিলে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে দূর করেন পথের শেষ কাঁটাটিও। ১৯ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন পোলার্ড। তখনই মূলত জয়ের আভাস পেতে থাকে রাজশাহী। তবে শেষদিকে খানিক লড়াইয়ের আভাস দেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। তার ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংসটি স্রেফ পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে ঢাকার পক্ষে। শেষতক নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১১৬ রান করতে সক্ষম হয় ঢাকা। বল হাতে রাজশাহীর পক্ষে মাত্র ৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন আরাফাত সানি। এছাড়া অধিনায়ক মিরাজ ১৮ রানে নেন ২টি উইকেট। ১টি করে উইকেট দখল করেন কামরুল ইসলাম রাব্বি, ইসুরু উদানা এবং মোস্তাফিজুর রহমান। এর আগে রাজশাহীর হাতে উইকেট ছিল। কিন্তু সেট হয়ে বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়ায় খেলায় ছন্দটা ধরে রাখতে পারেনি তারা। ঢাকা ডায়নামাইটসের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রানেই থামে মিরাজদের ইনিংস। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় রাজশাহী কিংস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ১১ বল খেলে মাত্র ১ রান করে ফেরেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
দ্বিতীয় উইকেটে অবশ্য এই ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস আর মার্শাল আইয়ুব। তবে ২৭ বলে ২৫ রান করে নাফীস ভুল করে বসেন। সুনিল নারিনকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ হন এই ওপেনার। ওই ওভারেই এক বল বিরতি দিয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠা মার্শাল আইয়ুবকেও ফিরিয়ে দেন নারিন। মার্শাল ৩১ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় করেন ৪৫ রান। চতুর্থ উইকেটে ৩৮ রানের আরেকটি জুটি গড়েন জাকির হাসান আর রায়ান টেন ডেসকাট। ১৮ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ২০ রান করে আল ইসলামের শিকার হন জাকির। এরপর দুই রানের ব্যবধানে ডেসকাটকেও (১৬ বলে ১৬) ফিরিয়ে রাজশাহীকে বিপদে ফেলে দেন নারিন। ইনিংসের ১৯তম ওভারে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে নুরুল হাসান সোহান দুর্দান্ত এক স্ট্যাম্পিং করেন। সেকুগে প্রসন্ন সাজঘরের পথ ধরেন মাত্র ২ রানেই। শেষ পর্যন্ত আর বড় স্কোর গড়া সম্ভব হয়নি রাজশাহীর। ৮ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন জঙ্কার। উদানা করেন ৪ বলে ৩ রান। ঢাকার পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল সুনিল নারিন। ৪ ওভারে ১৯ রানে ৩টি উইকেট নেন ক্যারিবীয় এই স্পিনার। এছাড়া আন্দ্রে রাসেল, আলিস আল ইসলাম এবং সাকিব আল হাসান নেন ১টি করে উইকেট।