ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে ফাটল ধরার আভাস দেখছে কংগ্রেস
১. বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটি ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তাতেও এখন ফাটল ধরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
২. রোহিঙ্গা সঙ্কট যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের ঢল বাংলাদেশের ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করে, সেই মানবিক বিপর্যয়ে ভারত কিন্তু সম্পূর্ণ হাত গুটিয়ে ছিল। এই সংকটে তারা (ভারত) পরিষ্কার মিয়ানমার সরকারের পক্ষ নিয়েছিল।
৩. শুধু তাই নয়, ভারতের লাখ লাখ বছরের পরম্পরা ভেঙে ও বহু রাজনীতিকের আবেদন উপেক্ষা করে মোদি সরকার ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরও জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করে। তাতে রোহিঙ্গা সংকট যে আরও জটিল হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৪. ২০১১ সালে কংগ্রেস আমলে যে স্থল সীমান্ত প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং তার পরিণতিতে ২০১৫ সালে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল— তার মাধ্যমে অর্জিত সুফলগুলো যে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেটা এখন পরিষ্কার চোখে পড়ছে।
‘পেশীশক্তির আস্ফালন’ যে কখনও ‘পরিণত ও দক্ষ কূটনীতি’র বিকল্প হতে পারে না, মোদি সরকারের সেটা এখন বোঝার সময় এসেছে বলেও কংগ্রেস মন্তব্য করেছে। নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ যে একারণেই ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকছে, দলিলে এই পর্যবেক্ষণও করা হয়েছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। গত দু-তিন বছরে ভারত ও বাংলাদেশের মন্ত্রী-আমলা-নীতি নির্ধারকরা প্রায় সবাই একবাক্যে বলেছেন, দু’দেশের সুসম্পর্ক সম্ভবত সর্বকালের সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করেছে। কিন্তু ভারতের প্রধান বিরোধী দলের দলিলে তার একেবারে উল্টো ছবিই কিন্তু তুলে ধরা হয়েছে। এই দলিলের বক্তব্য নিয়ে কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য মূল বয়ানের বাইরে বাড়তি বিশেষ কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু এটুকু যোগ করেছেন, ‘ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যতই দারুণভাবে দেখানোর চেষ্টা করুক, আমাদের সম্পর্কে যে অনেকগুলো অস্বস্তির উপাদান তৈরি হয়েছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে!’ তিস্তাচুক্তি সম্পাদন নিয়ে এখনও যে তেমন অগ্রগতি হলো না, সেটাকে একটা বড় অস্বস্তির উপাদান বলে কংগ্রেস নেতারা চিহ্নিত করছেন। এছাড়া, শেখ হাসিনা সরকার ট্রানজিট বা চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যাকসেসের মতো যেসব সুযোগ-সুবিধা ভারতকে দিয়েছে, তার ‘উপযুক্ত প্রতিদান’ এখনও বাংলাদেশকে দেওয়া যায়নি বলেই তাদের অভিমত। বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে যেভাবে অবৈধ বিদেশি নাগরিক চিহ্নিত করা হচ্ছে, সেটাও দুদেশের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস এমপি ও দলের জাতীয় মুখপাত্র সুস্মিতা দেব। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী শিলচর লোকসভা কেন্দ্রের এই এমপি বলেন, ‘আপনি আসামে বিদেশি নাগরিক চিহ্নিত করে তাদের তাড়াতে চাইছেন, খুব ভাল কথা। কিন্তু এই লোকগুলোকে কোথায় ঠেলে পাঠাবেন সেটা কি ঠিক হয়েছে? বাংলাদেশ তাদের নিতে রাজি কিনা, তা নিয়ে তাদের সঙ্গে কি কোনও কথাবার্তা হয়েছে? এই ধরনের কোনও সমঝোতা ছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটাই তো অর্থহীন!’ অর্থাৎ ঢাকাকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে আসামে যেভাবে ‘অবৈধ বিদেশি’দের খেদানোর কাজ চলছে, সেটাও দু’দেশের সম্পর্কের জন্য কোনও মঙ্গল বয়ে আনছে না বলেই ভারতের প্রধান বিরোধী দল মনে করছে।