আগামী ২২ মে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বাম সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘নীল দল’ এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’ নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে প্যানেল ঘোষণা করেছে। তবে এবার আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল নীল দল ভেঙে স্বতন্ত্র প্যানেলের আবির্ভাব হয়েছে। উভয় প্যানেল চূড়ান্তভাবে প্রার্থীদের মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচন কমিশনার বরাবর তা জমা দিয়েছে। তবে সাদা দল সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভক্ত নীল দল দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।

নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীনের নেতৃত্বে ঘোষিত প্যানেলের বাইরে গিয়ে ওই স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্রোহী নীল দলের দাবী, আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অনেক আগে। ফলে প্রথমবারের মত নীল দল ভেঙে স্বতন্ত্র প্যানেলের ঘোষণা আসলো। আর এ ঘটনায় নীল দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষকরা। নীল দলের এ বিভাজনের জন্য স্বতন্ত্র প্যানেলের শিক্ষকদের দায়ি করছেন আহ্বায়ক কমিটি। আর বিদ্রোহীরা দায়ী করেছে আহ্বায়ক কমিটিকে। স্বতন্ত্র প্যানেলও নীল কাগজেই তাদের তালিকা প্রকাশ করে আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ বলে দাবী করেছে। এতে করে নীল দলের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ নিয়েও ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে।

সূত্র জানায়, সিনেটে প্রতিনিধি নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৭মে প্রথম সাধারণ সভা করে নীল দল। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ১০মে তারিখে দ্বিতীয়বারের সভায় ৪০জনের তালিকা করা হয় এবং আহ্বায়ক আরও পাচঁজনের নামসহ ৪৫জনের নাম তালিকাবদ্ধ করার প্রস্তাব করেন। সেই তালিকা থেকে চূড়ান্তভাবে ৩৫জনের নাম নির্বাচন কমিশনার বরাবর প্রার্থী হিসেবে জমা দেওয়ার কথা।

সূত্র আরও জানায়, ১০ তারিখ রাতে আহ্বায়ক কমিটি খবর পায় অধ্যাপক মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে গোপনে আরেকটি প্যানেল করা হয়েছে। গোপন প্যানেলে আহ্বায়ক কমিটির ৪৫ জনের মধ্যে ১৪জনের নাম আছে। তখন আহ্বায়ক কমিটি ঐ ১৪জনকে বাদ দিয়ে ৩৫জনের প্যানেল জমা দেন। এই প্যানেল ১১ মে বৃহস্পতিবার সাড়ে ১২টায় জমা দেওয়া হয়। তার ঘণ্টাখানেক পরে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল আহ্বায়ক কমিটির বাদ দেওয়া ১৪জনসহ ৩৬জনের একটি প্যানেল জমা দেন।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল জানান, আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৪জনকে বাদ দেওয়া হচ্ছে এ খবর আগের রাতেই পান তিনি। পরের দিন জমা দেওয়ার আগে তালিকাটি দেখতে চাইলে তাকে দেখতে না দেওয়ার পরেই তিনি বাদ পড়াদের নিয়ে প্যানেল জমা দেন।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত নীল দলের প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া আহ্বায়কের পক্ষ থেকে বলেন, আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে যে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে তাই আসল ও চূড়ান্ত প্যানেল। এর বাইরে কেউ নীল দলের নামে প্যানেল দিলে সেটার সাথে নীল দলের কোন সম্পর্ক নেই। যে কেউ স্বতন্ত প্যানেল ঘোষণা করতে পারে।

মাকসুদ কামাল বলেন, যারা নির্বাচন করবে সাধারণ সভায় তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে রাতের বেলা তাদের নাম বাতিল করে দিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, সেই তালিকা অনুযায়ী পরের দিন মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। এখন মনোনয়ন দুইটি হয়েছে। আমরা ধৈর্য্যসহকারে অগ্রসর হচ্ছি। আমাদের মধ্যে বিভাজন কাম্য নয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন চাই।

তিনি আরও বলেন, নীল দলের আহ্বায়ক কমিটি বৈধ নয়, তারা অবৈধ। আহ্বায় কমিটি ও সাধারণ সভায় যে সব নাম ঘোষিত হয়েছে তাদেরকে বাদ দিয়ে রাতের অন্ধকারে গোপনীয়ভাবে সীলগালা করে জমা দেওয়া হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ বলে তিনি বলেন, গত ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল নীল দলের কমিটি গঠন করা হয়। রীতি অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও দুই বছরেও কমিটি না হওয়ার জন্য উপাচার্যের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত দায়ী। তারপরও আমরা নির্বাচন করার জন্য বলেছি। যে ঠিক আছে নির্বাচনটা করে তারা সরে যাক।

সূত্র জানায়, নীল দলের বিদ্রোহী গ্রুপ থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষক তাদের নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে মনোনয়ন পাওয়া কয়েকজন শিক্ষক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান বলেন, নাম প্রত্যাহারের এখনও সময় আছে। দেখি কী করা যায়। এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভাল একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিষয়গুলো অনেক বিব্রতকর অবস্থায় আছে। আমাদের নিজেদের জন্যও বিব্রতকর। একটা দলকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলছে। যারা এটা করেছে তারা ভাল কাজ করেনি। সময়ও ছিল আলোচনা করে সমাধান করার। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই মর্মাহত। নির্বাচন কমিশনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন জানান, প্রথম পর্যায়ে তিনটি প্যানেলে ১০৬ জনের মনোনয়ন তালিকা জমা দেওয়া হয়। পরে সেই তালিকা থেকে অধ্যাপক জি এম গোলজার হোসেন প্রার্থী হিসেবে তার নাম প্রত্যাহার করে নেন।

জানা যায়, অধ্যাপক জি এম গোলজার হোসেন অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বাধীণ স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দলের মনোনয়ন প্যানেলও ঘোষিত হয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ আখতার হোসেন খানের নেতৃত্বে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট এ মনোনয়ন গত বৃহস্পতিবার জমা দেওয়া হয়।

আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক ঘোষিত ও নাজমা শাহীনের নেতৃত্বে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন:
অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া, অধ্যাপক আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ, অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন, অধ্যাপক ইসতিয়াক মঈন সৈয়ধ, অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহমান, অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ, অধ্যাপক সুব্রত কুমার আদিত্য, অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা, অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, অধ্যাপক মোঃ রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক মোহাম্মাদ আলী আক্কাছ, অধ্যাপক মোঃ মজিবুর রহমান, অধ্যাপক মোঃ ফজলুর রহমান, মোঃ জিয়াউর রহমান, অধ্যাপক মোঃ আব্দুস ছামাদ, অধ্যাপক মোঃ আব্দুল আজিজ, অধ্যাপ মোঃ আফতাব উদ্দিন, অধ্যাপক মোঃ আফতাব আলী শেখ, অধ্যাপক মুবিনা খন্দকার, অধ্যাপক কাজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, অধ্যাপক মোঃ মাহাবুবুর রহমান, অধ্যাপক বায়াতুল্লাহ কাদেরী, অধ্যাপক নাজমা শাহীন, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন, অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ, সহযোগী অধ্যাপক এস এম রেজাউল করিম,

মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন(স্বতন্ত্র):

অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক জিনাত হুদা, অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, অধ্যাপক মোঃ হারুনুর রশীদ খান, অধ্যাপক এমরান কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুদ্দিন, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শাহ মোঃ মাসুম, অধ্যাপক জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, অধ্যাপক শারমিন রুমি আলীম, অধ্যাপক মোঃ আসাদুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুুৎফুল কবির, সহযোগী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ, অধ্যাপক সুব্রব কুমার সাহা, সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রহিম, সহকারী অধ্যাপক নাজির হোসেন খান, অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান, সহযোগী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ শওকত আলী, অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুব, অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার, অধ্যাপক মোঃ ফিরোজ জামান, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূইয়া, সহকারী অধ্যাপক মোঃ মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার ও অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে।

বিএনপি-জামায়তপন্থী সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন:

অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান, আব্দুস সালাম, এ টি এম জাফরুল আযম, এ এফ এম মোস্তাফিজুর রহমান, এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, এ বি এম শহিদুল ইসলাম, এস এম আরিফ মাহমুদ, গোলাম রব্বানী, দিলীপ কুমার বড়ুয়া, নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, মামুন আহমেদ, মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছনী, মোহাম্মদ এমরান কাইয়ুম, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, মো. আবদুল করিম, মো. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, মো. নুরুল আমিন, মো নুরুল ইসলাম, মো. মাহব্বত আলী, মো. মাহফুজুল হক, মো. মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া, মো. মোর্শেদ হাসান খান, মো. লুৎফর রহমান, মো. শাহ এমরান, মো. হাসানুজ্জামান, মো. হুমায়ুন কবীর, লায়লা নূর ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ দাউদ খাঁন, মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী, মো. আব্দুস সালাম আকান্দ, মো. ইসরাফিল প্রাং, মো. মহিউদ্দিন ও মো. সিরাজুল ইসলাম।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn