তদন্তের স্বার্থে যে কোনও কৌশল গ্রহণ করতে পারি: তুরিন আফরোজ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ মানবতাবিরোধী এক অপরাধীর সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা যদি সত্যি হয় তবে মন্ত্রণালয় অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে।’ তুরিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত বুধবার (৯ মে) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। তবে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্য এরকম—
‘আমাকে নিয়ে একটি অতি উৎসাহী দৈনিক পত্রিকাতে একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে তা ভাইরাল করে, আমাকে নিয়ে নানা কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। এটাও বলা হচ্ছে যে, আমাকে প্রসিকিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য:
১. আমি এখনও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে বহাল আছি। আমাকে কেউ বরখাস্ত করেনি।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ৮(২) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের একজন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং যে কোনও মামলাতে তদন্ত করার এখতিয়ার আমার আছে। আর তদন্ত করতে গেলে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সুতরাং,আমি তদন্তের স্বার্থে যে কোনও প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করতে পারি।
৩. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমি এপর্যন্ত প্রসিকিউটর হিসেবে যা কিছুই করেছি, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত ছিলেন।
৪. আমাকে নিয়ে সম্প্রতি যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সত্য নয়। যেহেতু বিষয়টি এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখছেন, তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তদন্ত শেষ হলে আমি আমার বক্তব্য সর্ব সম্মুখে প্রকাশ করবো। আশা করি, সেই পর্যন্ত আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমালোচকরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন।’ এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তুরিন বলেন, ‘আমার স্ট্যাটাসে আমি যা লিখেছি, সেটাই এখনও পর্যন্ত আমার অফিসিয়াল বক্তব্য। এর বাইরে এখন আমি কিছু বলবো না।’ট্রাইব্যুনালের সূত্রে থেকে জানা গেছে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠান। গত ১১ নভেম্বর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ওই আসামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ রয়েছে জানিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে বলেন। এছাড়া, এ বিষয়ে ওয়াহিদুল হকের কাছে প্রসিকিউটর তুরিন মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। পরে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নজরে এলে প্রসিকিউটর তুরিনকে এ মামলা থেকে প্রাথমিকভাবে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত চলা অবস্থায় তার হাতে থাকা ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য মামলা থেকেও তুরিনকে অব্যাহতি দেন চিফ প্রসিকিউটর। বুধবার (৯ মে) তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।