তাহিরপুরঃ তিন দিন পর ভেঁসে উঠল পলিনের লাশ
টেকেরঘাটের ডিসি পার্কের শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেকেই নিখোঁজের তিন দিন পর সোমবার সকালের দিকে পর্যটক ওয়াহিদ পলিনের ভাসমান লাশ ভেঁসে উঠল। নিহত ওয়াহিদ পলিন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার লাজুড় গ্রামের ও ঢাকার মতিঝিল ডিপিসি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামালের একমাত্র ছেলে। ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার ভ্রমণে বের হওয়ার পর ওয়াহিদ পলিন তার নিজের ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে গাড়ীতে বসে বন্ধুদের সাথে সেলফি তুলে নিজের পোষ্টে লিখেছিলেন ‘‘জীবনে প্রথমবারের মত সিলেটে বেড়াতে যাচ্ছি’’। কে জানত? রাজধানী ঢাকার মীরপুর ১৪ নং এর বাসা থেকে মা- বাবা ও একমাত্র ছোট বোনের নিকট থেকে ওই বিদায় নিয়ে আসাটাই ছিল ওয়াহিদ পলিনের জন্য শেষবারের মত বিদায় নেয়ার পর্ব।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাহিদ, মারুফ হোসেন, ওয়াহিদ পলিন, রুশনী ও বাঁধনসহ ৫ বন্ধুবান্ধব মিলে তাহিরপুরের টাঙ্গায়ার হাওরে শুক্রবার ভ্রমণে এসে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের নৌঘাটে রাত্রীযাপন করেন। শরীরের টায়ার জড়িয়ে শনিবার দুপর ২টার দিকে ওয়াহিদ পলিনসহ সবাই টেকেরঘাট সীমান্তের জিরো লাইন বরাবর ডিসি পার্কের শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেকে গোসল করতে নামলে ৪ বন্ধু গোসল শেষে তীরে উঠে এলেও ওয়াহিদ পলিন সাঁতার না জানায় লেকের পানিতে ডুবে যেতে থাকেন।
এদিকে নিখোঁজের পর থেকে টাঙ্গায়ার হাওরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্রটের নেতৃত্বে পুলিশ-বিজিবি ও স্থানীয় লোকজন লেকের পানিতে শনিবার দুপুরের পর থেকে দিনভর কয়েকটি নৌকা নিয়ে সন্ধান চালায়। এরপর সিলেটে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে ডুবুরি দল তলব করা হলে সেখান থেকে ৬ সদস্যস্যের একটি ডুবুরি দল রাত সোয়া ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত লেকের পানিতে সন্ধান চালিয়েও পলিনের কোন সন্ধান পাননি। ফের রবিবার বেলা সোয়া ১১ টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লেকের চারপাশ ও লেকের গভীর জলে নীচে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তল্লাশী চালিয়ে গেলেও পলিনের কোনো সন্ধান না পেয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ডুবুরি দলে সদস্য কবির হোসেন উদ্ধার কাজ স্থগিত করে নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দল নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। এদিকে পর্যটক ওয়াহিদ পলিন লেকের পানিতে নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রবিবার সকাল থেকেই লেকের চারপাশ এমনকি ভারতীয় জিরো লাইনের মেঘালয় পাহাড়ের ওপর এপার- ওপারের কয়েক হাজার লোকজন সমবেত হয়ে তার উদ্ধার কাজে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।’
অপরদিকে একমাত্র ছেলে নিখোঁজের খবর পেয়ে শনিবার দুপুরেই মতিঝিলের ডিপিসি অফিস থেকে পরিবারের লোকজনকে সাথে নিয়ে রওয়ানা দিয়ে রবিবার সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ঘটনাস্থল টেকেরঘাটে পৌছেন পিতা মোস্তাফা কামাল। ’ মোস্তাফা কামালের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পরিণ ছিল বড়। শোকাহত এ পিতা সোমবার একমাত্র পুত্রের লাশের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, আমি তার ও পরিবারের সবাইকে বলে এসেছিলাম পলিনকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব, তার মাকে এখনো জানানোই হয়নি পলিন আর কোন দিন বাবা- মা বলে ডাকবে না ,সে তো অকালেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।’ ঢাকার মিরপুর ১৪ নংএর বাসা পলিনের পরিবারের সদস্যদের সাথে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে কান্না আর আহাজারির রোল শোনা গেছে। পলিনের ছোট বোন নিশাত কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, মা এখনও জানেন না যে, বন্ধুদের
সাথে জীবনের প্রথমে বারের মত সিলেটের টাঙ্গায়ার হাওরের ভ্রমণে গিয়ে ভাইয়া যে আজ লাশ হয়ে ফিরছেন মাকে জানানো হয়েছে ভাইয়া দূর্ঘটনায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন আজ বাবা ভাইয়াকে বাসায় নিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে তাহিরপুরের টেকেরঘাটের ঘটনাস্থল থাকা টাঙ্ধসঢ়;গুয়ার হাওরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাকিল আহমেদ সোমবার জানান, নিহতের পরিবারের ইচ্ছে অনুযায়ী ময়না তদন্ত শেষে দ্রুত পলিনের লাশ তার পিতার নিকট হস্থান্তরের ব্যবস্থা নিয়েছে তাহিরপুর থানা পুলিশ।