দিরাইয়ের শিশু তুহিন হত্যাকান্ডঃ দ্রুত চার্জশীট দেওয়া হবে-পুলিশ সুপার
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম বলেছেন, নির্ভুলভাবে দ্রুত দিরাইয়ের পাঁচ বছরের শিশু তুহিন হত্যাকা-ের চার্জশীট প্রদান করা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে সুনামগঞ্জের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই মন্তব্য করেন। পুলিশ সুপার বলেন, শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনার পর গ্রেফতারকৃত তুহিনের চাচা নাছির মিয়া ও মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে চাচাতো ভাই শাহ্রিয়ার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মছব্বির এবং জমশেদ মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে দুই দফা রিমা-ে নেবার পরও তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এই তিনজনসহ এই মামলার ৫ আসামী কারাগারে রয়েছেন। পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে, নির্ভুলভাবে, দ্রুত এই মামলার চার্জশীট প্রদান করবে। গত ১৪ অক্টোবর রাতে দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামের সাড়ে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন কে নির্মমভাবে গলা, কান, লিঙ্গ কেটে হত্যা করা হয়। খুনিরা তুহিনের পেটে ছুড়া ঢুকিয়ে বাড়ির পাশে কদম গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। ওই দিনই দুপুরে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মছব্বির, জমশেদ মিয়া, নাছির মিয়া, জাকিরুল, তুহিনের চাচী ও চাচাতো ভাই মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে শাহ্রিয়ার এবং চাচাতো বোনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের তিন সদস্য হত্যাকা-ের সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে, অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির ও চাচা আব্দুল মছব্বির এবং জমশেদ মিয়া’র ৫ দিনের রিমা-ের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিরাই থানার সাবইন্সপেক্টর আবু তাহের। আদালত শুনানী শেষে ওই দিন প্রথম দফায় এই তিনজনের তিন দিনের রিমা- মঞ্জুর করেন। পরে আবার রিমা-ে নেওয়া হয়েছিল এই তিনজনকে। রিমা- শেষে আদালতের আদেশে জেল হাজতে পাঠানো হয় তাদের। এছাড়া চাচা নাছির মিয়া ও মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে চাচাতো ভাই শাহ্রিয়ার ঘটনার দুই দিন পরই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার জানান, সুনামগঞ্জের নদীপথে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলায় কিশোর গ্যাং আছে কি-না খুঁজছে পুলিশ। ২ দিন আগে তাহিরপুর থেকে মোটর সাইকেল চুরির অপরাধে তিন কিশোরকে আটক করা হয়েছে। এদের সঙ্গে আরও কিশোর এমন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছে কি-না যাচাই করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ শহরে অপরাধ দমনে পুলিশি অভিযান জোরদার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দোকানপাঠ সারা রাত খোলা থাকবে, পুলিশ নিরাপত্তা দেবে। অপরাধবোধ না থাকলে ভয় পাবার কিছু নেই। পুলিশ সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে বাধা দেবে না। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পুলিশ অ্যাকশনে যাবে। শিক্ষার্থীরা স্কুলের পোশাক পড়ে বখাটেপনায় যুক্ত হবে, মোটর সাইকেল নিয়ে ইভটিজিং করবে, এটি হতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে অবহিত করার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের জাউয়াবাজার, গোবিন্দগঞ্জ ও পাগলাবাজার এলাকায় যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে পুলিশ পদক্ষেপ নেবে। বখাটেপনা রুখতে পুলিশকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, সেলফিতে তোলা অপরাধির ছবি পুলিশ সুপারের সঙ্গে থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে। মতবিনিময় সভায় পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।সুত্র দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর।