সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বুধবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী। তিনি জানান, সুনামগঞ্জে এবার বোরো ফসল চাষ হয়েছে প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে। সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আবাদকৃত ফসলের ৮২ ভাগ বলা হলেও সেটা ৯০ ভাগের বেশি বলে মনে করেন কৃষকেরা। এমন পরিস্থিতিতে বছরের একটিমাত্র ফসল হারিয়ে কৃষক পরিবারগুলোতে হাহাকার চলছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি পাউবো, ঠিকাদার ও পিআইসি’র অনিয়ম-দুর্নীতির নানা চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, ফসলের সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সরকার ৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। সুনামগঞ্জের বৃহৎ ৩৭টি হাওরসহ ৪২টি হাওরে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ২২৫টি প্রকল্পের পিআইসি অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান-সদস্যদের সভাপতি করে গঠিত এসব প্রকল্প অনুমোদন দেন স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ। অপরদিকে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করে পাউবো। প্রকল্পের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারদের কাজ ৩১ মার্চ ২০১৭-এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করার অসৎ উদ্দেশ্যে অনেক পিআইসি ও ঠিকাদারগণ কাজ শুরু করেছেন কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ সম্পন্নের শেষ পর্যায়ে এবং বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পরে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের সরকারি বরাদ্দের এই টাকা দিয়ে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও কাজ হয়েছে নামে মাত্র। বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ পাউবো প্রকৌশলী, পিআইসি, ঠিকাদারগণ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। ঠিকাদারের ২০টি বাঁধে কোনো কাজই হয়নি। পাউবো-এর দাবি, কাজ না হওয়া বাঁধের সংখ্যা ১২টি। যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেসকল বাঁধের কাজ শুরু হয়নি ঐসকল বাঁধ এবং আংশিক নির্মিত একের পর এক ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যেতে শুরু করে।
জাতীয় একটি দৈনিকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ১১৬টি প্যাকেজের কাজে ঠিকাদারগণ সর্বোচ্চ ২০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেন। বেশিরভাগ ঠিকাদার সম্পন্ন হওয়া কাজ থেকে বিল তুলে নেন অনেক বেশি। বাঁধ নির্মাণের এই দুর্নীতির সঙ্গে পাউবো’র যে তিন কর্মকর্তার নাম ওঠে এসেছে তারা হলেন সিলেটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার ও সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন। অভিযোগের পর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। যদিও তার এই প্রত্যাহারকে গুরু পাপে লঘু দ- অথবা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগকে আড়াল করার অপপ্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাড. হোসেন তওফিক চৌধুরী আরো বলেন, সুনামগঞ্জের বোরো ফসল নিয়ে দুর্দশার এই চিত্র এবার নতুন নয়। বছরের পর বছর এক ফসলের উপর নির্ভরশীল কৃষকরা দুর্নীতি আর প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে করতে অনেকটা সর্বস্বান্ত। এই অবস্থার পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কালো থাবা থেকে বোরো চাষীদের রক্ষা করতে জেলার প্রতিটি বিবেকবান মানুষ আজ সোচ্চার, প্রতিবাদমুখর। তারা মনে করেন সুনামগঞ্জের বোরো চাষীরাই জেলার অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি। এই খাতকে সুরক্ষা দিতে না পারলে এই জনপদের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনেতিকভাবে যারপরনাই পিছিয়ে পড়বে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn