এন আই বুলবুল |

আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি নাটক নির্মাণের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। প্রতিদিনই চ্যানেলগুলোতে একাধিক ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। ধারাবাহিকের ভিড়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর খণ্ড-নাটক। বিশেষ দিবসগুলোতেই খণ্ড নাটকের প্রাধান্য থাকে। যার কারণে শিল্পীদের বছরের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় ধারাবাহিকের কাজ নিয়ে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী ধারাবাহিকে কাজ করছেন বলে জানা যায়। অনেকে আবার মাঝে মাঝে ধারাবাহিক নাটক থেকে বিরতিও নেন। দর্শকদের পাশাপাশি আজকাল অভিনয় শিল্পীরাও ধারাবাহিক নাটকের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। এই ধারাবাহিকগুলোতে গল্প এবং শিল্পীদের চরিত্রের যে চেহারা শুরুতে দেখা যায় পরবর্তীতে তার ধারাবাহিকতা থাকছে না বলে অনেক শিল্পী মন্তব্য করেন। গল্প উপস্থাপন ও সংলাপেও দুর্বলতা প্রকাশ পায় নির্মাতার। অনেক নির্মাতাই পর্বের প্রয়োজনে কোনো কোনো চরিত্রকে লম্বা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সেই সময়টুকুতে চরিত্রের প্রতি শিল্পীরও কোনো আন্তরিকতা থাকে না। দায়সারাভাবেই কাজ করেন তিনি। বরাবরই দর্শক টানতে ব্যর্থ হয় সেই ধারাবাহিকগুলো। দেশীয় সিরিয়াল থেকে দূরে সরে দর্শক বাধ্য হয়ে দেখছেন বিদেশি চ্যানেলগুলো। মহিলা দর্শকদের বেশিরভাগ স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলা দেখছেন। এক্ষেত্রে দর্শকদের চ্যানেলমুখী করতে আবার অনেক চ্যানেল বিদেশি সিরিয়ালও প্রচার করছে। এদিক থেকে টিভি চ্যানেলগুলো কিছুটা লাভবান হলেও বিপর্যয় ঘটছে দেশীয় নাট্যাঙ্গনে। কারণ বিদেশি সিরিয়ালের জন্য টিভি চ্যানেলগুলো যে পরিমাণ অর্থ খরচ করছে তার কিছুটা দেশীয় ধারাবাহিকের জন্য করলে ধারাবাহিক নাটকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলেও অনেকে মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা ও অভিনেতা গাজী রাকায়েত বলেন, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অব্যস্থাপনার কারণে ধারাবাহিক নাটকগুলো থেকে দর্শক সরে যাচ্ছে।  সত্যি বলতে চ্যানেলগুলো দেশীয় নাটকের প্রতি আন্তরিক নয়। তারা অনেক দুর্বল স্ক্রিপ্টের ধারাবাহিক নাটক প্রচার করছে। একই  সঙ্গে কিছু অদক্ষ নির্মাতা চ্যানেলের এই ধরনের নাটক নির্মাণ করে দিচ্ছে। এখানে শিল্পীদের কিছু করার নেই। একজন শিল্পী সব সময় চেষ্টা করেন ভালো কিছু দর্শকদের দিতে। মানহীন এই ধারাবাহিকগুলোর কারণে শিল্পীদের অস্তিত্বে টান পড়ছে। অনেক শিল্পী নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমাদের টিভি অঙ্গনে অদক্ষ নির্মাতাদের প্রভাব বেড়ে গেছে। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই তারা নির্মাণ শুরু করে। পর্ব তৈরিতে তারা ব্যস্ত থাকে। গল্পের কতটুকু ধারাবাহিকতা রক্ষা হচ্ছে তার প্রতি কোনো আন্তরিকতা থাকে না। অভিনেত্রী ও নির্মাতা তানিয়া আহমেদ বলেন, ধারাবাহিক নাটকে গল্প অনেক গুরত্বপূর্ণ। দর্শক ধরে রাখতে হলে গল্পের বিকল্প কিছু নেই। বাংলাদেশ টেলিভিশনে যে ধারাবাহিকগুলো দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে সেগুলোর প্রতিটিতেই দারুণ গল্প ছিল। দর্শক সেই গল্পের টানেই নাটক দেখতো। আমাদের বেসরকারি বেশ কিছু চ্যানেলেও কিছু ধারাবাহিক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু সেগুলো সংখ্যায় আনেক কম। এমন দুর্বল চিত্রের গল্পে ধারাবাহিক নির্মাণ হতে থাকলে আমাদের টিভি নাটকের দর্শক শূন্যের  কোঠায় চলে আসবে। তানিয়া আরো বলেন, আমাদের এখন ধারাবাহিক নাটকে গল্পের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নির্মাণেও অনেক দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। বিদেশি সিরিয়ালগুলোতে নির্মাণ শৈলীতে অনেক যত্ন থাকে। গল্প বলাতেও চমক থাকে। এই বিষয়গুলো আমাদের ধারাবাহিকগুলোতে আজকাল তেমন দেখা যায় না। নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, ধারাবাহিক নাটকে দর্শকদের ফেরাতে হলে অবশ্যই গল্পের প্রতি জোর দিতে হবে। সাহিত্য নির্ভর নাটক নির্মাণের প্রতি নির্মাতাদের এগিয়ে আসতে হবে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ভালো ধারাবাহিক প্রচারের প্রতিও আন্তরিক হতে হবে। ধারাবাহিক নাটকগুলোর গল্পে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে আমাদের নাটকের দারুণ দুরবস্থা দেখতে হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn