নানা নাটকীয়তায় মহাসমাবেশ বিএনপির
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে রেজিস্ট্রারি মাঠে মঞ্চ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিএনপি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এ মঞ্চ নির্মিত হয়। বেলা ২টার দিকে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিলসহকারে সমাবেশে যোগ দেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হলেন খালেদা জিয়া। এই নেত্রী যখন সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়ান, তখন চারদিকে একটা নূর ছড়িয়ে পড়ে। এই নূর হচ্ছে স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের নূর, গণতন্ত্রের নূর, ধর্মের নূর। ইতিহাস সৃষ্টি করা এই নেত্রীকে মুক্তি দিতেই হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।’ সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ শাসনে থাকলে এ দেশ স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারবে না। তিনদফা মঞ্চ ভাঙা ও সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ বন্ধ করার চেষ্টা সরকারের ভয় থেকে। তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদ কাজ করছে না, বিচার বিভাগ ব্যবস্থাকে দেউলিয়া করে সরকার ব্যবহার করছে। ২৬ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ মামলা দিয়েছে সরকার। ১৯৭৮ সালে জিয়া ৯৩ সালে খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছেন, বর্তমান সরকার ১১ লাখ রোহিঙ্গার একজনকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা বাতিল ও অবিলম্বে নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১২ বছর ধরে জুয়া, ক্যাসিনো চলছে। সরকার ধরতে পারেনি। এখন যখন ধরা পড়ে গেছে, তখন বলছে বিএনপি সরকারের আমল থেকে এটা চলে আসছে। তাহলে ১২ বছর কি করছিল? আঙ্গুল চুষছিল। এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। জুয়ায় ভাসছে সারা দেশ।’ সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় সমাবেশে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এই সরকার কোনো সরকার নয়। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতি করেছে। পুলিশ, বিজিবিসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে আওয়ামী লীগ। বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে এই সরকার।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে, সুচিন্তিতভাবে এই দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তারা একটি একটি করে রাষ্ট্রের সমস্তু প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। সংসদ নাই, একটি গৃহপালিত বিরোধীদল সেখানে বসে আছে।’
বিচার ব্যবস্থায় ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে তাদের প্রয়োজনে, রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে। প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে সরকার।’ ফখরুল বলেন, ‘সরকার গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে জনগণের উপর বোঝা বাড়াচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দেশে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাট চলছে।’ সিলেটে বিএনপির সমাবেশে প্রশাসনের বাঁধা প্রদানের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) তারা হঠাৎ করে সমাবেশ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল কেন? এর কারণ, কয়েকদিন আগে সিলেটে ছাত্রদল মিছিল করেছিল, তাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিল। এতে তারা ভয় পেয়েছিল।’ সমাবেশে বিএনপি নেতারা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন এবং ইলিয়াস আলীসহ সকল ‘গুমকৃত’নেতাকর্মীর সন্ধান দাবি করেন।
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকার গ্যাস বিদ্যুৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের সবাই লুটেরা। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ২ বছরের বেশি সময় ধরে এদেশে আছে। একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি সরকার। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান, ১৯৯৩ সালে খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছিলেন। এদিকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সময়মতো বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সময়মতো বৃহত্তর কর্মসূচি দেবে বিএনপি। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার অংশ হিসেবেই সিলেটসহ দেশের বিভাগীয় ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোতে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। দুপুরে একটি ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় তাদের স্বাগত জানান সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, এমএ হক, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মুজিবুর রহমান, শফিউদ্দিন চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।