নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের নতুন সদস্য হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে আরও ১২০ জনের। এই ১২০ জনের ২৫ শতাংশই বাংলাদেশি। যাঁদের আবার ৩ জন নারী। ১১ ডিসেম্বর এই গ্র্যাজুয়েশন হয়। এঁদের প্রায় সবাই সিটি পুলিশের ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট বিভাগের সদস্য। নতুন শপথ নেওয়া এই সদস্যরা নিউইয়র্ক পুলিশের পোশাক গায়ে জড়িয়ে এঁরা এখন এই শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন। একই দিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ম্যানহাটনের ভূগর্ভস্থ পথে, যে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছে, সে ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে একজন বাংলাদেশির নাম আসায় যাঁরা বেদনায়  মুষড়ে পড়ছেন তাঁদের জন্যই এই গর্বের খবরটি। কেননা, মুদ্রার অপর পিঠে বাংলাদেশি সন্তানেরা এই নগরে তাঁদের গৌরবগাথা সাজাচ্ছে। ৮ ডিসেম্বর এসব নতুন পুলিশ সদস্যের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া এই পুলিশ সদস্যদের একজন পাপিয়া শারমীন জানান, তাঁর ভালো লাগার কথা। বলেন, ‘আমি এই দেশের প্রতি, এই শহরের প্রতি কৃতজ্ঞ। কেননা, আমার নিজ দেশ বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে মামা-চাচা-অথবা মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া হয়তো কোনো দিনই চাকরি পেতাম না। কিন্তু, এই শহর আমাকে আমার আত্মমর্যাদা বোঝার সুযোগ দিয়েছে। আমি গর্ব করে বলতে পারছি আমি নিউইয়র্ক পুলিশে কাজ করি।’ পাপিয়ার মতো ১২০ জন নতুন পুলিশ সদস্য যাদের ২৫ ভাগই বাংলাদেশি, তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার মধ্য দিয়ে। এখন পুলিশ বিভাগের ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার পর ভবিষ্যতে এনওয়াইপিডির মূল বিভাগে অফিসার হওয়ার জন্যও তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। এখানে মূল বিভাগের অফিসার পদে এরই মধ্যে অন্তত ২০০ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাজ করছেন। আর পাপিয়াদের মতো কর্মী আছেন আরও প্রায় ৭০০। সব মিলিয়ে নিউইয়র্ক পুলিশে প্রায় ৯০০ সদস্য আছেন, যাঁদের মূল শিকড় বাংলাদেশে।
নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশি সদস্যদের সংগঠন বাংলাদেশ আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন-বাপার সাংগঠনিক সম্পাদক কবীর হ‌ুমায়ূন বলেন, ‘এটাই আমার আসল বাংলাদেশিদের চিত্র, যারা এই দেশের মাটিকে আপন করে নিয়েছে, একজন ভিনদেশি হিসেবে নয়, বরং আমেরিকার পতাকাকে সামনে নিয়ে, আমেরিকা গঠন আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।’ কবীর হুমায়ূন বলেন, ‘সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নেই, সন্ত্রাসীর কোনো জাতিগত পরিচয় নেই, তার একটাই পরিচয় সে সন্ত্রাস দলভুক্ত। আমরা নিউইয়র্ক পুলিশের সদস্যরা দুঃখিত যে, আরও একটি ঘটনা ঘটেছে ১১ ডিসেম্বর, যার নামের সঙ্গে বাংলাদেশ শব্দটি এসেছে। তবে তার এই নামকে আমাদের নামকে কলঙ্কিত করবে না। কেননা, আমরা যারা এই শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখছি, আমাদের ভাবমূর্তি আমরা তিলে তিলে গড়ে তুলেছি। আজ আমাদের আলাদা সম্মান আছে। সেই সম্মান কোনো একজনের অপকর্ম দিয়ে ম্লান করা যাবে না। তবে এতটুকু অনুরোধ, আমাদের পিতামাতারা যেন সচেতন থাকেন। এমনকি নিজ সন্তান, ভাইবোন অথবা আত্মীয়স্বজন কারও গতিবিধি সন্দেহজনক দেখলে নিজেদের স্বার্থেই যেন পুলিশকে জানান। এতে আমাদের অবস্থান দুর্বল হবে না বরং আরও মজবুত হবে।’ কবীর হ‌ুমায়ূন আও বলেন, তিনি তাঁর কর্মে অসাধারণ দক্ষতা আর নিষ্ঠার জন্য নিউইয়র্ক পুলিশের সেরা পুলিশ হিসেবে পরপর তিনবার মনোনীত হয়েছেন। ২০১৪ সাল, ২০১৫ এবং ২০১৬ সাল, টানা তিনবার ‘কপ অব দ্য ইয়ার’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সেই পথের-ই পথিক হবে আরও অনেক সদস্য, যাঁরা নাম লিখিয়েছেন সদ্য নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীতে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn