নিজেকে চোর চোর লাগে-
আকসার আহমদের ফেসবুক থেকে-
নিউইয়র্ক সাটফিন বুলভার্ড থেকে Q25 বাস ধরলাম কাজে আসবো বলে। আমার গন্তব্য ফ্লাশিং,কলেজ পয়েন্ট। এটি এই বাসের শুরু অথবা সমাপনী স্টপেজ। সুতরাং আমার চির নির্দিষ্ট সিটটি পেতে কোনই সমস্যা হয় না কখনো। বসতেই সিটের নীচে পায়ের মধ্যে ভারি কিছু একটা অনুভব করলাম। পা দিয়ে ছুঁয়ে না-ছুঁয়েই বুঝতে পারলাম, এটি খাদ্যের একটি অক্ষত থলে। আমার হারাম হালালের একটু সমস্যা আছে বিধায় ঐ একই পা দিয়ে আমি থলিটিকে সামনের সিটের তলে ঠেলে দিলাম। পরের স্টপেজে উঠলেন এক কৃষ্ণাঙ্গিনী ও তার ৫/৬ বছরের ছেলে। তারা কিছু টের পেল বলে মনে হল না বরং অল্প কয়টি স্টপেজ পরেই তারা নামতে উদ্যত হল। মা এক্সিট দরজায় যেতেই এই ছেলে থলেটি দেখতে পেয়ে মা মা বলে চিৎকার জুড়ে দিল। কিন্তু মা ফিরে এলেন না।
একই জায়গা থেকে অনেক যাত্রী উঠলেন বাসে। কিন্তু আমার ঠিক সামনের সিটটিতে বসলেন এক বাঙালি নারী। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই মহিলা থলেটি না-দেখেই পারেন না। আমি বাঙালি, তিনিও বাঙালি। সুতরাং আমি যখন দেখেছি, তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন। তিনি (মহিলা) আমাকে একটুও হতাশ না করে থলেটি দেখতে পেলেন। তারপর তার ঠিক পিঁছনে বসা আমাকে তিনি ফিরে ফিরে দেখার চেষ্টা করতে থাকলেন। বাঙালি মানস মাত্রই আমাকে ফিরে ফিরে দেখার কারণটি বোধগম্য।
আমি আমার মনে মনে আবার জপলাম- আপু, নিতে চাইলে নিয়ে নেন। কেউ কিচ্ছু বলবে না। শেষ স্টপেজের কিছু আগে ড্রাইভার পুরান চালান নামিয়ে বাসে নতুন চালান নেন। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখলাম, অপুর্ব চোর চোর আচরনে গেরস্থের ভঙ্গিমায় আমার বোন থলেটি নিয়ে বাস থেকে নেমে গেলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে- এটি আবার ফেসবুকে লিখার কী হল? কারণটি হল- আমার নিজেকে কেন জানি খুব চোর চোর লাগছিল। বুকে থুকপুকও কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। বিঃদ্রঃ– যদিও ফেলে যাওয়া খাদ্যের কোন বেগ আপনার করে নেয়া মোটেই কোন অপরাধ নয় এদেশে।