নৌকার জোয়ার তুলতে নেতারা যাবেন ৬ সিটিতে
ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, এমপিরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। সে কারণে তফসিল ঘোষণার আগেই সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে প্রতিটি সিটিতে যাচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জেলা-মহানগরীতে বৈঠকে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশের পাশাপাশি জনসভায় চাইছেন নৌকা মার্কায় ভোট। ইতিমধ্যে রাজশাহী ও সিলেটে ভোট চেয়েছেন কাদের। ১১ ও ২৫ নভেম্বর যাবেন গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে।
রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ১২ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঢাকায় দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। ওইদিন সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্ভব হলে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হতে পারে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সমঝোতায় না এলে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশনগুলোয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন এবং একক প্রার্থী রাখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রার্থীদের পক্ষে জোর প্রচার-প্রচারণার জন্য বলা হয়েছে। দলীয় সূত্রমতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছয় সিটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এজন্য এবার কোমর বেঁধে মাঠে নামছেন তারা। মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিতে পারলেও সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন। এ ক্ষেত্রে ছয়টি সিটি করপোরেশনে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন চার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ছয় সাংগঠনিক সম্পাদক।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সিলেটে, ডা. দীপু মনি গাজীপুরে, জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজশাহী ও রংপুরে, আবদুর রহমান বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকবেন। একই সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আহমদ হোসেন সিলেটে, বি এম মোজাম্মেল হক রংপুরে, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বরিশালে, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন খুলনায়, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাজশাহীতে ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি না হওয়ায় সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন।
যে কোনো একটি সিটিতে কাজে লাগানো হতে পারে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীমকেও। তিনিও এমপি না হওয়ায় সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে থাকার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া দলের নেতা কাজী জাফর উল্লাহ, পীযূষকান্তি ভট্টাচার্য, আবদুল মান্নান খান, আকতারুজ্জামান, ফরিদুন্নাহার লাইলী, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, দেলোয়ার হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, হারুনুর রশিদ, শামসুন্নাহার চাঁপা, আবদুস সাত্তার, হাবিবুর রহমান সিরাজ, অসীম কুমার উকিল, ডা. রোকেয়া সুলতানা, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলাম আমিন, এস এম কামাল হোসেন, নজিবুল্লাহ হিরু, আমিরুল ইসলাম মিলন, গোলাম রাব্বানী চিনু, রিয়াজুল কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, শাম্মী আহমেদ, মারুফা আক্তার পপিসহ দলের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মাঠে নামানো হবে। তারা নির্বাচনী এলাকায় থেকে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সিটি নির্বাচনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। গত নয় বছরে সরকারের যেসব অভাবনীয় সাফল্য রয়েছে, সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের নেতিবাচক রাজনীতি তুলে ধরা হবে। দলের আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বে থাকা নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধতা ও সরকারের উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ আমাদের প্রধান শক্তি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া বা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করলে কীভাবে সামাল দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌকার বিপক্ষে গেলেই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, নির্বাচনী ফসল ঘরে তুলতে প্রথমে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের জন্য কাজ করছি। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, সর্বস্তরে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি না থাকলে যে অন্যরা উন্নয়ন করতে চান না, তা খুলনাবাসী অনুধাবন করতে পেরেছেন। তাই তারা আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।