পরিকল্পনামন্ত্রী সাক্ষাৎকার- দেশে উন্নয়ন চলছে দ্বিগুণ গতিতে
আবু হেনা মুহিব-পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, কভিড মহামারির কারণে একপর্যায়ে সারা বিশ্বের জীবনযাত্রা থমকে যায়। বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। এতে কারও হাত ছিল না। বর্তমানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। এখন দ্বিগুণ গতিতে উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। রাত-দিন কাজ চলবে। যাতে গেল ছয় মাসে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়। কভিডের কারণে সরকার কোনো প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসবে না। সব প্রকল্পেই প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা হবে। করোনার কারণে ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। কভিডের কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় সংকোচনে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবেও ব্যয় সংকোচনের বিভিন্ন পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভা কিংবা বৈঠক আয়োজনে এখন আর ব্যয় বলতে তেমন কিছু হচ্ছে না। উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও মৌলিক সেবাপ্রাপ্তির লক্ষ্য নির্বিঘ্ন রেখে ব্যয় কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা চলছে। উদাহরণস্বরূপ, একটা খেলার মাঠে মূল মাঠ না হলে খেলা চলবে না। সেখানে মাঠ নির্মাণ হবেই। তবে বিশ্রামাগার কিংবা অন্যান্য কিছু স্থাপনা আপাতত যদি পিছিয়ে দেওয়া যায় তাহলে কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে। এভাবেই চিন্তাভাবনা হচ্ছে।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, ‘যে ব্যয় প্রয়োজন নেই, সেই ব্যয়ের লাগাম টানতে আমরা চেষ্টা করছি। সম্প্রতি একনেকের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতেই এমন কিছু খরচের খাত কেটে দিয়েছেন। সুতরাং সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারের সর্বস্তরে সাশ্রয়ের মূলনীতি রয়েছে। আর গাড়ি কেনা না-কেনার বিষয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। যদি কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে গাড়ি না কেনার সিদ্ধান্ত আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পরও বলবৎ থাকতে পারে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলেছেন, কভিড পরিস্থিতিতে সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প এ বছর বাদ দেওয়া যেত, সরকার সে পথে হাঁটেনি। অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই মতামতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলেছেন তাদের বিবেচনা থেকে। আমরা তাদের ভাবনারও অমর্যাদা করি না। তবে জ্ঞানত কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আমরা নিচ্ছি না।’ তিনি বলেন, জনগণের প্রয়োজনে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করেই প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে। তবে এ বছর সাশ্রয়ীভাবে কিছুটা কাটছাঁট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অবশ্য টাকার জন্য কোনো প্রকল্প বাদ যাবে না। কারণ টাকা কোনো সমস্যা নয়। বিদেশিরা আমাদের টাকা দিতে চায়।
কভিডের প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, প্রণোদনা ব্যয় জোগান- এ রকম কিছু নতুন খাতে এ বছর সরকারের বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়বে। সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তাদের সাড়া কেমন জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময়ই ঋণ নেয়। পৃথিবীর সব দেশেই ঋণ দেওয়ার এবং নেওয়ার রেওয়াজ আছে। এ বছর আমাদের রাজস্ব আহরণ কম হবে। সে কারণে সরকার ঋণ নেবে। কী পরিমাণ নেওয়া হবে সেটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের সাড়া বেশ ভালো। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ সব পক্ষই ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাড়তি সহায়তা পাওয়া যাবে। আগামী নভেম্বর নাগাদ বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে। সেই নিরিখে আগামী বাজেটের পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত ৫০ বিলিয়ন ডলার এখন পাইপলাইনে আছে। বাস্তবায়ন সক্ষমতা ঘাটতির কারণে বছরে ১৬ শতাংশের বেশির অর্থ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ে বিশেষ কোনো তৎপরতার কথা ভাবছেন কিনা জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু খরচ করছি। কিছু পারছি না নানান টেকনিক্যাল কারণে। এখানে একটা বিষয় বোঝা দরকার, টাকা আমাদের অ্যাকাউন্টে আসা মাত্রই সুদ গণনা শুরু হয়ে যাবে। এ কারণে আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ছাড় করাতে চাই না, যতক্ষণ পর্যন্ত এখানে ব্যয় শুরু হবে। উন্নয়ন সহযোগীর হাতে টাকা থাকলে সুদ দিতে হবে না। তবে অর্থ ছাড় করানোর জন্য তৎপরতা বাড়ানো হবে।’
করোনার কারণে বাজেট সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেট সহায়তা পেতে দাতাদের বোঝাতে হয়। বাজেট সহায়তা দিলে লাভ কী কিংবা কম সুদে সে কেন আমাকে ঋণ দেবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের কল্যাণ, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি বিষয় থাকে। বাজেট সহায়তার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদেরও কিছু বাড়তি আইনকানুন মানতে হয়। এজন্য কিছু কাজ করার কথা সাধারণত বলে থাকে তারা। সেটা আমাদের জন্য সব সময় গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। যেমন সামাজিক সুরক্ষা খাতের ব্যয় বাজেটের মধ্যে আছে। তারা যদি বলে এটা বাদ দিতে হবে, তখন আমাদের পক্ষে মানা কঠিন হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই বাজেট সহায়তা নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্র-সমকাল