কিন্তু এখানে আমার প্রশ্ন- এরা তো সর্বোচ্চ বিদ্যারীঠ বুয়েটে ঢোকার আগে এমন নিষ্ঠুর দানব ছিল না। এরাও তো ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠা এক একটা সোনার টুকরা ছেলে। প্রত্যেকটা ছেলে ছোটবেলা থেকে স্কলার। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন পাওয়া, কেউ কেউ নটরডেম কলেজের ছাত্র- যেখানে পডার সুযোগ পাওয়া যেনো তেনো ব্যাপার না”, এটা আমরা সবাই জানি। তাহলে তাদের এই ভয়ঙ্কর দানব কে বানিয়েছে? কেনো পাড়া মহল্লায় বেড়ে উঠা শান্ত ভদ্র পড়ুয়া ছেলেটি আজ নিকৃষ্ট মানুষ?
এটার উত্তর কি?
আজ আমরা কোথায় দাডিয়ে আছি, আমাদের ভবিষ্যত আজ আমাদের সামনে অন্ধকারে ডুবছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করি- সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্য করেন। হ্যাঁ …. আবরারের মৃত্যুটা অনেক করুণ এবং বেদনাদায়ক। যা ষোলকোটি মানুষকে নাডা দিয়েছে। আবরারের পরিবার এই শোক থেকে কখনও বের হয়ে আসতে পারবে না, এটা বুকে জমাট বাঁধা নীল কষ্ট ।কিন্তু আজ আবরারের এই নির্মম মৃত্যু- আমাদেরকে জীবন্ত দানবগুলোকে আঙ্গুল দিয়ে চিহ্নিত করে দেখিয়ে দিছে। আজ আমরা এদের ধরতে পেরেছি, জানতে পেরেছি – এভাবে কত আবরার নিষ্ঠুর অত্যাচারের শিকার হয়েছিল।
কিন্তু করুণা হচ্ছে এই দানব গুলোর জন্য। এরা তে দুষ্ট রাজনীতির শিকার। ওরা জানেই না ওদের কে দেয়া অবাধ ক্ষমতা, অর্থ, নেশা- এক একটা চোরাবালির গর্ত। একবার এই গর্তে পড়েছ তো আর বেরুনোর পথ নেই। এখন একের পর এক অপরাধ করে যাও আর থামাথামি নেই- বড় ভাইদের আদেশ মানতে বাধ্য।অথচ কথিত এই বড় ভাইরা লোভ দেখিয়ে তাদের বিপথে এনেছে, কলমের পরিবর্তে তুলে দিয়েছে অস্র। নেশা দিয়ে করেছে তাদের বিবেক শূন্য। টাকা দিয়ে করেছে চরিত্র লুন্ঠন। সর্বশেষে এই মেধাবী মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানটি হয়ে পড়ল খুনি, যা আমাদের কাম্য নয়। আমরা সবাই আবরার হত্যা নিয়ে অনেক বেশি শোকে বিহ্বল, তেমনি অনেক বেশি অনুতপ্ত। যারা আবরারকে এভাবে মেরেছে তারা তো আমাদেরই সন্তান, এরাও তো কোনো মায়ের দশমাস দশদিন গর্ভে ধারন করা। আমার প্রশ্ন -একটা সন্তান দেশের সবচেয়ে বিদ্যাপীঠ এ পড়ার সুযোগ পেতে কত বেশি পরিশ্রম করার পর এই খানে পড়ার সুযোগ পায়। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে শুধু গোল্ডেন পেলে হবে না, বোর্ড পরীক্ষার পর করতে হয় আরো কঠোর পরিশ্রম তাহলে সে বুয়েট, মেডিকেল কিংবা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাবে। এক কথায় রাতের ঘুম, বিনোদন হারাম। শুধু পড়া আর পড়া। সে সাথে মা বাবারও অক্লান্ত পরিশ্রম আর দুঃচিন্তা। এভাবে এক একটা ভর্তি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তারা তাদের গন্তব্য পৌঁছার পথ খুঁজে পায়। মা বাবাও একটু শান্তি পায়। তার সন্তান ভাল মানুষ হবে।সবচেয়ে বেশি সার্থকতা পায় সেই ছেলের বাবা মা, যে সন্তানের বাবা দিনমুজুর কিংবা ভ্যানওয়ালা।ওদের স্বপ্ন থাকে তখন আকাশ চুম্বী। ভাবে, এই তো আর কটাদিন আমার খোকা মস্ত বড় ডাক্তার কিংবা ইন্জিনিয়ার বা বড় কোনো সরকারী কর্মকর্তা হবে। আমাদের দুখের দিন তো শেষ।
মা বাবার হাজারো স্বপ্ন নিয়ে সন্তানের পথ চলা। কিন্তু সে স্বপ্ন তো আমরা খুন করে দিচ্ছি।রাজনীতির নামে অনৈতিক বেড়াজালে ওদের আমরা ধ্বংস করে দিয়েছিএবং দিচ্ছি।মধ্যবিত্ত পরিবারে বেডে উঠা সন্তান গুলো বাবা মায়ের সল্প আয়ের মাঝে অভ্যস্ত , অথচ তাদের হাতে দিয়ে দিচ্ছি অবৈধ অর্থ, রেগিং এর নামে দিয়ে দিচ্ছি অবাধ ক্ষমতা যা পরবর্তীতে টর্চার শেলের ভিলেন। তাদের হাতে নিয়ন্ত্রীত হয় আইন । যে সমস্ত ছেলে গুলো রাত জেগে পড়াশুনা করে অভ্যস্ত তাদের ডুবিয়ে দিয়েছি নেশায়। অর্থ, নেশা আর অবৈধ ক্ষমতা তাদের বানিয়ে দিয়েছে এক একটি দানব। তাই সবার আগে নিধন কর উচিত এই দানব বানানোর কারিগরগুলোকে, যাদের দ্বারা আমাদের সু সন্তান গুলো কুসন্তানে পরিণত হচ্ছে এবং হবে। যদি নিরপেক্ষ বিচার হয় তাহলে, বড়ভাই নামধারীর পরিচয় উম্মোচন করা হোক তা না হলে আমরা এই কু চক্রের অভিসাপ থেকে কখনও নিস্তার পাবো না। আমরা অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হচ্ছি এবং হবো।
সর্বশেষ যে কথাটি না বললে নয়, পিতামাতার পর সন্তানের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করে, সে হলো শিক্ষক। শিক্ষকতা একটি আদর্শ এবং গুরুত্বপূর্ণ পেশা।এই পেশার সম্মানবোধ আকাশচুম্বী। কিছু কিছু শিক্ষকের আদর্শহীনতার কারনে আমাদের ভবিষ্যত কর্ণধার আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। শিক্ষক মানেই মানুষ গড়ার কারিগর, আর সেই শিক্ষকরা যদি ক্ষমতা, অর্থের লোভে যদি নীতিহীন হোন, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। আমরা জানি, শিক্ষকতা পেশায় মাসিক যা আয়, তা দিয়ে চলতে-নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।তারপরও আমাদের অনেকে এই পেশার আদর্শকে ভালবেসে শিক্ষকতার সাথে জড়িত হয়। মা বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক যেমন ,সন্তানের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক তেমন। শিক্ষক মানেই তো “মানুষ গড়ার কারিগর”। হয়তো অর্থের দিকে দরিদ্রতম পেশা।তাই আমি সেই শিক্ষকদের বলছি, যারা অর্থ আর ক্ষমতার লোভে আমাদের সন্তানদের বিপথে নিচ্ছেন বা সন্তানদের খারাপ পথে যেতে দিচ্ছেন কিংবা নিজের স্বার্থের জন্য রাজনীতির কুৎসিত দিকে আমাদের সন্তানদের ব্যবহার করছেন ,তাদের প্রতি আমার অনুরোধ শিক্ষকতার আদর্শের প্রতি আপনাদের ভালবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ না থাকে তাহলেএই পেশায় আসবেন না। দেশের সবচেয়ে মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আপনাদের অবস্হান।আপনাদের হাতে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত। একজন সন্তানকে মানবিক গুনাবলীতে সয়ং সম্পূর্ণ করতে মা বাবার সাথে সাথে শিক্ষকের গুরুত্ব অনেক বেশি। যাদের ক্ষমতা আর বিত্তের লোভ আছে, তারা এই পেশায় আসবেন না। বিত্তশালী হওয়ার অনেক পথ আছে, আপনারা ঐ পথে যান কিন্তু আমাদের সন্তানদের রেহায় দিন। আমরা সুস্হ মানসিকতাবোধ মানুষ চায়, অমানুষ নয়। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)