অবশেষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে প্রকাশ্যে বিরোধ মিটল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি নীল দলের শিক্ষকদের বিবদমান দুই গ্রুপের। বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল নীল দল খ্যাত আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক এবং বিদ্রোহী গ্রুপের ১৪ জন শিক্ষককে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘণ্টাব্যাপী আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের সব বিভেদ ভুলে বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করার নির্দেশ দেন। নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন স্বাক্ষরিত প্যানেল নির্বাচনে কমিশনে জমা দেয়ার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বাধীন নীল দলের পরিচয়ে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল জমা দেয়। এতে গুরুতর মোড় নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি। সাধারণ সদস্যের ভেতরে শুরু আলোচনা-সমালোচনা। অনৈক্যের পরিণতিতে সিনেট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্যানেলের, ভরাডুবির আশঙ্কায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সাধারণ সদস্যরা।

রবিবার নীল দলের মূল প্যানেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীনের নেতৃত্বে ৩৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র নির্বাচন কমিশন বরাবর দাখিল করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘নীল দলের প্রার্থী ব্যতিরেকে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নীলকাগজ ব্যবহার করতে পারবে না। এই প্যানেলের সঙ্গে নীল দলের কোনো রকম সম্পর্ক নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার কৌশল স্বরূপ নব্য এই স্বতন্ত্র প্যানেলের আবির্ভাব ঘটেছে। যারা নিজেদেরকে নীল দল বলে দাবি করছে।’

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নীল দল একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি হিসেবে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এ দলের ভূমিকা অপরিসীম। দীর্ঘ দিন নীল দলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রচার-প্রচারণায় নীল কাগজ ব্যবহার করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন সিনেট নির্বাচনেও নীল কাগজ তাদের প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু কতিপয় শিক্ষক এ নির্বাচনে স্বঘোষিত প্রার্থী হিসেবে নিজেদের প্রচার-প্রচারণায় নীলকাগজ ব্যবহার করে আমাদের ঐতিহ্যগত গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে যা আমাদের নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।’

এমন পরিস্থিতিতে ঢাবি সিনেট নির্বাচন কমিশন মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থিতা বাতিল করলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নেতারা। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ডাক আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা মাকসুদ কামালকে বলেন, ‘তুমি না আমাকে কথা দিয়েছিলে যে, প্যানেল জমা দিবেনা, তাহলে এমন হল কেন?’ প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশ্নে বেশ বিব্রত দেখায় মাকসুদ কামালকে। সব দ্বন্দ্ব ভুলে সকলে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দুপুরে মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে বলেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn