নিউজ ডেস্ক:: প্রাথমিক স্তরের সমাপনী-ইবতেদায়ী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কড়াকড়ি করা হবে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো। পরীক্ষাকেন্দ্রে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ করতে সারাদেশের পরীক্ষাকেন্দ্র মনিটরিং করতে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের ৩৮ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, ‘পরীক্ষা গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। প্রশ্নপত্র ফাঁস বা গুজব ছড়ানো বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন ও প্রশ্নপত্র বিরতণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘বিজিপ্রেস থেকে শুরু করে ট্রেজারি পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের সব পথ বন্ধ করা হয়েছে। ট্রেজারি থেকে পরীক্ষার শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নের প্যাকেট খোলা হয়। সেখান থেকে কেন্দ্রে প্রশ্ন সরবরাহ করার সময় কেউ যদি প্রশ্নের ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দেয় সেজন্য পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আজ মঙ্গলবার একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম এ ব্যাপারে সজাগ অবস্থানে রয়েছেন। তারপরও একাধিক সেটের প্রশ্ন করা হয়েছে। কোনো কারণে একটি সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেলে বিকল্প সেটের প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানায়, আগামী রোববার ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা। এতে অংশ নিতে ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৮ লাখ চার হাজার ৫০৯ জন এবং ইবতেদায়ীতে দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৫৬ জন। ডিপিই’র দেয়া তথ্যানুযায়ী, ‘ এবার গত বছরের চেয়ে এক লাখ ২৮ হাজার ২২৩ জন কম পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। গত বছর ৩২ লাখ ২৪ হাজার ২৮৮ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিল। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৩ জন এবং ইবতেদায়ীতে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ জন। ২০১৫ সালে উভয় পরীক্ষায় ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৪ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহামান আগামী বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন। এদিকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর থেকেই প্রতি বছর পরীক্ষার্থী বাড়লেও এবার ছন্দপতন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় দেড় লাখ পরীক্ষার্থী কমেছে।

সূত্র আরও জানায়, এবার সারা দেশে সাত হাজার ২৬৭টি এবং বিদেশে ১২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৪০৪টি কেন্দ্র দুর্গম এলাকায়। গত বছর সারাদেশে সাত হাজার ১৮১টি এবং বিদেশে ১১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ হিসেবে কেন্দ্র বেড়েছে ৮৭টি। পরীক্ষার্থী কমার কারণ জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, কয়েক বছর ধরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেকে কমেছে। আগামী কয়েক বছর পর এ হার আরও কমবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার কারণেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা কার্যক্রম তদারকি, সমন্বয় ও মনিটরিং করার জন্য আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলায় মন্ত্রণালয়ের ৩৮ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদিরকে ঢাকা ও রংপুর বিভাগের, মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে খুলনা, মো. আকরাম-আল-হোসেনকে বরিশাল, হোসেন আর কে ময়মনসিংহ, যুগ্ম সচিব শেখ আতাহার হোসেনকে চট্টগ্রাম, পুলক রঞ্জনকে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রণালয়, ডিপিই, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, জেলা ও উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে। ডিপিইও আলাদা মনিটরিং টিম গঠন করেছে।

প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু হয়। পরের বছর ইবতেদায়ীতে এ পরীক্ষা চালু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নবম বারের মতো প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল ঘোষণা করা হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রথমে এই পরীক্ষার সময় দুই ঘণ্টা হলেও পরে ৩০ মিনিট বাড়িয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়। প্রতিদিন বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn