ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজনের বিরুদ্ধে চাল পাঁচারের অভিযোগ
আল-হেলাল-
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজনের বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল পাঁচারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আনলেন একই পরিষদের ৪ সদস্য। অভিযোগ উত্থাপনকারীরা হচ্ছেন ১নং ওয়ার্ডের সদস্য নেছার আহমদ, ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল হেকিম,৬ নং ওয়ার্ড সদস্য অশ্বিনী বর্মন,৯ নং ওয়ার্ড সদস্য বিজয়কর প্রমুখ।
তারা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩৮ কেজি চাল ও ৫শত টাকা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মধ্যে বন্টনের লক্ষ্যে চেয়ারম্যান আমাদেরকে ১৫৫ জন কৃষকের নাম দেওয়ার জন্য আহবাণ জানান। আমরা প্রত্যেকেই যথারীতি ১৫৫ জনের নাম দেই। আমরা নাম দেওয়ার পরে যথারীতি ত্রাণের টাকা ও চাল দেওয়া শুরু হয়। ত্রাণ বিতরনকালে চেয়ারম্যান জানান,যারা ইতিপূর্বে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচি ও ভিজিডি এর চাল পেয়েছে তাদের নাম বাতিল করার জন্য। তখন আমরা পূর্বের দেয়া তালিকাভুক্ত নাম বাতিল করে সংশোধিত মাস্টাররোলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের নাম তালিকা প্রদান করি। কিন্তু পূর্বেও বাজেয়াপ্ত তালিকা বিভিন্ন মাধ্যমে সরবরাহ করে জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের বিরুদ্ভে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অথচ কথিত তালিকাটি আদৌ সঠিক তালিকা নহে। ত্রাণ বিতরনের ৪/৫ দিন পর আমার ওয়ার্ড মিটিং হলে সেখানে মিটিং-এ চেয়ারম্যান,ত্রাণ পূণর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ফয়জুল ইসলাম,সচিব ও মেম্বারগনের উপস্থিতিতে আমি জানাই আমি ১৫৫টা নাম পাইছি আমি কোন কারচুপি বা জালিয়াতি স্বজনপ্রীতি করিনি। তখন চেয়ারম্যান দাবী করেন ১৫৫টা নয় তোমার ওয়ার্ডে নাম দিছি ২২৬ টা। বাকী নামগুলি আমি নিজে আমার ব্যক্তিগত প্রতিনিধির মাধ্যমে দিয়েছি। উল্লেখ্য পিরোজপুর গ্রামের বিপ্লব তালুকদার,ঘাগটিয়ার মকবুল হোসেনগংদের মাধ্যমে নাম তালিকা সংগ্রহক্রমে চেয়ারম্যান রাজন ঐ নামগুলো মেম্বারদের নামে চালিয়ে দেন। মেম্বাররা আরো জানান,ত্রাণের চাল ১০ বস্তা চাল চেয়ারম্যান নিজে কালোবাজারে বিক্রি করেছেন। চৌকিদার নুরুল ইসলাম,চেয়ারম্যান রাজন ও তার প্রাইভেট লোকজন কর্তৃক ২২ বস্তা ত্রাণের চাল পাচারের দৃশ্য অবলোকন করেছেন। আমরা ৪ মেম্বার ঘটনাটি জানি ও তাৎক্ষনিকভাবে চাল চুরির প্রতিবাদ করি। তখন চেয়ারম্যান,“তোমাদেরও খরচপাতি হয়েছে তোমরারেও কিছু টাকা দেয়া হবে”বলে সান্তনা দেন। মোট ২১০০ নামের মধ্যে চেয়ারম্যান একাই ৭৫০টি নাম দেন। পরবর্তীতে আরো ২০০ কার্ড ২য় দফায় যুক্ত হয়। ঐ ২ শত নামও আমাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে দেন চেয়ারম্যান। সুতরাং কোন ধরনের জালিয়াতি হলে চেয়ারম্যানের দেয়া মোট সাড়ে ৯ শত কার্ডে জালিয়াতি ও প্রতারনা হয়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের এলাকা ৭নং ওয়ার্ডে সর্বাধিক কার্ড প্রদান করেছেন। শুধু তাই নয় মোট ২৩০০ কার্ডের মধ্যে ৩ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যাকে আনুপাতিক হারে কার্ড দেননি চেয়ারম্যান। তারা নির্ধারিত কার্ড চাইলে তোমরা মহিলা মানুষ বিপদে পড়বায় বলে সান্তনা স্বরুপ তাদের প্রত্যেককে মাত্র ৬টি করে কার্ড প্রদান করেন। তারা চ্যালেঞ্জ সহকারে আরো বলেন আমাদের দেয়া কার্ডগুলোতে কোন অনিয়ম জালিয়াতি নেই। তাছাড়া মূল মাস্টাররোল কপিতে ট্যাগ অফিসার,পিআইও,সচিব,চেয়ারম্যান ও আমাদের ওয়ার্ড মেম্বারদের স্বাক্ষর আছে। মূল তালিকা যাছাই করলে আসল তথ্য পাওয়া যাবে। সংরক্ষিত ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা আমেনা বেগম মেম্বারদের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চেয়ারম্যান আমাদেরকে আদৌ কোন কার্ড দেননি। এ ব্যাপারে পরিষদের সকল সদস্য,সদস্যা ও চেয়ারম্যানের মাঝে তুমুল বাকবিতন্ডা পর্যন্ত হয়েছে। আমরা একাধিক ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্যা হওয়ার পরও ত্রাণের চাল বন্টনে আমাদেও সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করা হয়েছে।
৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল হেকিম বলেন,সম্প্রতি চেয়ারম্যান রাজন শহরের এক ব্যক্তিকে বেআইনীভাবে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে কালেক্টর নিয়োগ করত: আমাদের গ্রামের পাশের্^র আবুয়া নদী অবৈধভাবে বিক্রি করে এ টাকা সরকারী কোষাঘারে জমা না দিয়ে নিজে পকেটভারী করেছেন। আমি তার এহেন বেআইনী কার্যক্রমের প্রতিবাদ করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন অভিযোগে দোষী সাব্যস্তক্রমে ফায়দা হাছিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে খুন ও গুমের হুমকী দিচ্ছেন। গত ১৩ জুলাই উপজেলা সদরস্থ হলরুমে নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম এর কাছে ৩ চেয়ারম্যান যথাক্রমে হারুন অর রশীদ দুলাল,ভাইস চেয়ারম্যান সোলেমান তালুকদার ও রনজিত চৌধুরী রাজন কর্তৃক আবুয়া নদী বিক্রয় করার ঘটনা সরাসরি উপস্থাপন করলে তারা আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে হয়রানীমূলক মিথ্যা অভিযোগের আশ্রয় নেয়। জেলা প্রশাসক তাদেরকে অভিযোগের ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখার নির্দেশ দিলে তারা অকপটে নদী বিক্রির কথা স্বীকার করে। তারা এমনও জানায় যে,পরের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় পূর্বের রেজ্যুলেশন অর্থাৎ কালেক্টর নিয়োগের মাধ্যমে নদী বিক্রির পূর্ব সিদ্বান্ত বাতিল করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন,ইউপি সদস্যারা অনিয়ম করতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে গেছেন। সরকারী কোষাঘারে আত্মসাৎকৃত ত্রাণের মূল্য জমা দেওয়ার সরকারী নির্দেশকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এখন তারা বেসামাল হয়ে আবোল তাবুল বকছেন। তাদের অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ও ভিত্তিহীন। অন্যদিকে মেম্বাররা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।