ফুটবলারদের ‘ডাইভিং’ ঠেকাতে আইন হলো ইংলিশ ফুটবলে
ফুটবল খেলোয়াড়দের এক বহু নিন্দিত কাজ হচ্ছে ডাইভিং বা ফাউলের শিকার হবার ভান করে পড়ে যাওয়া। এর উদ্দেশ্য অনেক সময়ই হয় রেফারিকে ধোঁকা দিয়ে পেনাল্টি বা ফ্রি কিক আদায় করে নেয়া, বা প্রতিপক্ষের একজন খেলোয়াড়কে লাল কার্ডের শিকার বানানো। এই ডাইভিং ঠেকানোর জন্য ইংলিশ ফুটবল এসোসিয়েশন এক নতুন নিয়ম করেছে – কোন খেলোয়াড় ডাইভ দিয়েছেন প্রমাণ হলে তাকে পরের দু ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে। আগামি মওসুম থেকেই কার্যকর হবে এই নতুন নিয়ম। তবে প্রশ্ন হলো, কতটা কাজ হবে এতে? বহু বড় বড় তারকার বিরুদ্ধে এই ডাইভিং এর অভিযোগ উঠেছে, – তারা অনেক সময়ই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ফাউল বা ল্যাং-এর শিকার হয়ে পড়ে যাবার ভান করেন, এবং রেফারির কাছ থেকে পেনাল্টি বা ফ্রি-কিক আদায় বরে নেন। যা থেকে গোল হয়ে অনেক সময় খেলার ফল বদলে যায়।
অনেক হৈচৈ হলেও পেশাদারি ফুটবলে এটা পুরোপুরি বন্ধ কখনোই হয় নি।
ইংলিশ ফুটবলে যেমন, তেমন ইউরোপিয়ান ফুটবলেও এ সমস্যা বহুদিন ধরেই চলছে। এখন এই ডাইভিং ঠেকানোর জন্য ইংলিশ ফুটবল এসোসিয়েশন নিয়ম করেছে যে এমন অভিযোগ উঠলে খেলার পর তিন সদস্যের একটি প্যানেল খেলাটির ভিডিও দেখবেন । এ কমিটিতে সাবেক রেফারি, সাবেক ম্যানেজার এবং সাবেক খেলোয়াড় থাকবেন। ভিডিও দেখে যদি সর্বসম্মত ভাবে ডাইভিং এর অভিযোগ প্রমাণ হয় – তাহলে তাকে পরের দু ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এটা কার্যকর হবে আগামি ফুটবল মওসুম থেকে। অনেকেই এ পদক্ষেপের সমর্থন করেছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব বার্নলির ম্যানেজার শন ডাইশ বলেছেন, এর ফলে ৬ মাসের মধ্যে ডাইভিংএর সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু ক্রিস্টাল প্যালেসের ম্যানেজার স্যাম এ্যালারডাইস বলছেন, এটা একটা খুবই বাজে পদক্ষেপ নিয়েছে এফ এ, কারণ এতে একজন নির্দোষ খেলোয়াড়েরও দু’ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার শাস্তি হয়ে যেতে পারে –এবং সে ক্ষেত্রে প্রতিকার কি হবে?
তবে অনেকেই বলছেন, ইংলিশ ফুটবলে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবার সুদুরপ্রসারী প্রভাব পড়বে ইউরোপের ফুটবলেও। এ নিয়ে মাদ্রিদ থেকে ফুটবল সাংবাদিক ফিল মিনশুল বলছেন, এ নিয়ে মতামত এখনো বিভক্ত। তাই এটা কার্যকর হবার পর কি হয় তা দেখতে হবে। এবার ইংল্যান্ডে যেরকম বেশ কয়েকজন নামকরা খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ডাইভিংএর অভিযোগ উঠেছে – যেমন ম্যানচেস্টার সিটির লিরয় সানে, টটেনহ্যামের ডেলি আলি, বা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মার্কাস র্যাশফোর্ড। “তবে স্কটল্যান্ডে এ রকম একটি নিয়ম কার্যকর হয়েছে ২০১১ সাল থেকে । এ বছর মাত্র তিন জন খেলোয়াড়ের ডাইভিং এর জন্য এরকম দু ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি হয়েছে। এখন অনেকেই মনে করেন যে এতে ডাইভিং একেবারে বন্ধ না হলেও সংখ্যাটা হয়তো কমে আসবে।” “আপনি দু চোখ খোলা রাখলেই এটা টের পাবেন, যে ডাইভিং কিভাবে ঘটছে। স্প্যানিশ লিগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালে।ডা, নেইমার বা সুয়ারেজের মতো বড় বড় খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধেও ডাইভিংএর বহু অভিযোগ উঠেছে। আপনি যদি ১৯৬০/৭০ দশকের খেলোয়াড়দের জীবনী পড়েন – দেখবেন যে পরবর্তীকালে তারা ডাইভিং এর কথা স্বীকার করেছেন। কাজেই এটা যে সবসময়ই ফুটবলে হয়ে এসেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।” অনেক সময় এই ডাইভিংএর ব্যাপারটা পরিকল্পিত ভাবে ঘটে, হয়তো ম্যানেজাররাও অনেক সময় খেলোয়াড়দের বলে দেন, এরকম কিছু করার জন্য, বলছিলেন ফিল মিনশুল।“যদিও সুনির্দিষ্টভাবে কারো প্রতি অঙ্গুলি-নির্দেশ করা যাবে না কিন্তু আমরা অনুমান করতে পারি যে কিছু ম্যানেজার নিশ্চয়ই খেলোয়াড়দের বলেন প্রতিপক্ষ দলটিকে ১০ জনে নামিয়ে আনতে , বা যে কোন ভাবে একটা পেনাল্টি আদায় করে নিতে। এটা হয়তো একজন খেলোয়াড় এই অভিনয়ে কতটা পটু তার ওপর নির্ভর করে, হয়তো রেফারি কে তার ওপরও নির্ভর করে। তবে রেফারিরাও এখন এসব চালাকি ধরে ফেলতে পাকা হয়ে উঠেছেন। ”“মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইংল্যান্ডে এখন ডাইভিং এর জন্য খেলোয়াড়দের শাস্তি হবার ঘটনা কম, ইউরোপের তুলনায় । ঐতিহাসিক ভাবে স্পেন এবং ইতালির লিগে ডাইভিং বেশি হয় বলে মনে করা হয়, তেমনি ল্যাটিন আমেরিকান খেলোয়া্ড়দের সম্পর্কেও লোকের ধারণা যে এরা পড়ে যাবার ভান করতে অত্যন্ত পটু – কিন্তু এটা প্রমাণ করা খুব কঠিন । কিন্তু ইউরোপের সেরা রেফারিরা ডাইভিং ধরে ফেলতে অনেক দক্ষ। ইংলিশ ফুটবল সম্পর্কে লোকের ধারণা হলো এখানে খুব রুক্ষ, কড়া ট্যাকলিংএর ফুটবল খেলা হয়, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইংলিশ ফুটবলে এখন ইউরোপ,ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকার বহু দেশের ফুটবলাররা খেলছে।” “কিন্তু স্পেনে বা ইতালিতে একেকটা খেলায় ৬/৭ টা হলুদ কার্ড দেখানো সাধারণ ব্যাপার, এবং তার কয়েকটা থাকে ডাইভিংএর জন্য, সে তুলনায় ইংল্যান্ডে ডাইভিংএর শাস্তি হওয়া অনেক কম। ইংলিশ ফুটবল কর্তৃপক্ষ এখন এই যে কড়া নিয়ম করেছে – হয়তো এটাও তার একটা কারণ ” ফিল মিনশুল বলছিলেন, এটা খুবই সম্ভব যে ইংলিশ ফুটবলে ডাইভিং এর জন্য দু ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার এই নিয়ম কার্যকর হলে তা প্রভাব হবে সুদুরপ্রসারী।“ইংল্যান্ড ডাইভিংএর বিরুদ্ধে এরকম পদক্ষেপ নিলে বিশ্বব্যাপী ফুটবলে ও তার একটা প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ইউরোপে ইতালি, স্পেন বা জার্মানির লিগগুলো এখনও এরকম কোন নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে না। তবে ইতালি এবং স্পেনে কোন খেলোয়াড়ের ডাইভিং যদি একেবার দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ পায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ফুটবল খেলার মর্যাদাহানির অভিযোগ আনাার বিধান আছে। তবে ইংল্যান্ড দু ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নিলে তার কিছু একটা প্রভাব প্রথমে ইউরোপের ওপরই পড়বে। এশিয়া, আফ্রিকা, এবং বাকি বিশ্বে তার প্রভাবটা পড়বে এরও পরে।” বাংলাদেশের একজন ফুটবলার, এবং জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলছিলেন, সব দেশের ফুটবলেই এটা ঘটে থাকে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ইংলিশ ফুটবলে ডাইভিং ঠেকানোর এই নতুন নিয়ম ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই তিনি মত প্রকাশ করেন।