হারারে: বন্দিদশা থেকে জনসমক্ষে এলেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দুই দিন পর শুক্রবার প্রকাশ্যে এসে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নীল-হলুদ গাউন আর হ্যাট পরে শুক্রবার জিম্বাবুয়ে ওপেন ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে যোগ দেন মুগাবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য। উপস্থিত সবাই একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পর পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুগাবে। তবে এ অনুষ্ঠানে তার স্ত্রী গ্রেস মুগাবে বা শিক্ষামন্ত্রী জনাথন মোয়োকে দেখা যায়নি। মুগাবের উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর মঙ্গলবার রাতে জিম্বাবুয়ের সৈন্যরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন জেডবিসির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরদিন ওই টেলিভিশনেই এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সিবুসিসো মোয়ো বলেন, সরকারের কর্তৃত্ব নেয়া তাদের উদ্দেশ্য নয়। প্রেসিডেন্ট মুগাবেকে ঘিরে থাকা ‘অপরাধীদের দলকে’ লক্ষ্য করেই তাদের এ অভিযান। কিন্তু তারপরই মুগাবেকে গৃহবন্দি করা হয়েছে বলে খবর আসে। সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) মুগাবে ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয়।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সেনাবাহিনী মুগাবেকে পদত্যাগের চাপ দিলেও তাতে তিনি রাজি হননি। নিজেকে এখনো তিনি জিম্বাবুয়ের বৈধ প্রেসিডেন্ট বলেই দাবি করছেন। মুগাবের স্ত্রী গ্রেস নামিবিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে কোনো কোনো গণমাধ্যমে খবর দেওয়া হলেও নামিবিয়া সরকার তা অস্বীকার করে। এসএডিসির মধ্যস্থতায় সমঝোতা না হওয়ায় মুগাবের দল জানু-পিএফ এর একজন মুখপাত্র শুক্রবার জানান, তারাও আর প্রেসিডেন্ট পদে মুগাবেকে চান না। আর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই জনগণকে এর ফলাফল জানানো সম্ভব হবে বলে আশা করছে তারা। এর কয়েক ঘণ্টা পর গৃহবন্দি দশা থেকে বেরিয়ে এসে সমাবর্তনে যোগ দেন মুগাবে। প্রেসিডেন্ট মুগাবে গত সপ্তাহে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করার পর থেকে রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত। এত দিন নানগাগওয়াকেই মুগাবের উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু মুগাবে সম্প্রতি তার স্ত্রী ৫২ বছর বয়সী গ্রেস মুগাবেকে উত্তরসূরি করার পরিকল্পনা করেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি বরখাস্ত করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগওয়াকে।

৭৫ বছর বয়সী নানগাগওয়া দেশটির সেনাবাহিনীর কাছে বেশ জনপ্রিয়। মুগাবের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয় সেনাবাহিনী। আর এ কারণেই প্রেসিডেন্ট পদে নানগাগওয়াকে বসাতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। আরও বরখাস্ত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যাওয়া নানগাগওয়া পরদিন বুধবার দেশে ফেরেন। এরপর শুরু হয় মুগাবের সঙ্গে আলোচনা। যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা পাবার পর থেকে, ১৯৮০ সাল থেকে বেশির ভাগ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন মুগাবে। তবে, মুগাবেকে গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn