বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ে ৪৮ লাখ, মৃত ৬১
বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ লাখ ছাড়ানোর খবর দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যায় ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত মোট ২২ জেলা বন্যার কবলে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ ২৭ হাজার। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ২৬টি জেলার ১৩১টি উপজেলায় বানের পানি ঢুকেছে বলে অধিদপ্তরের তথ্য। এতে এক লাখ ৮৬ হাজার ৫৬৭টি পরিবারের ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ৯৪৪ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ৪৫ হাজার।
রিয়াজ আহমেদ বলেন, “এসব জেলা কোনো না কোনোভাবে বন্যাক্রান্ত। কোনো কোনো জায়গায় কম পানি ঢুকেছে, কোথাও বেশি। কমবেশি বন্যায় আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ২৬টি। এরমধ্যে ২০টি জেলা বন্যা উপদ্রুত। বাকী জেলাগুলোর একটি অথবা দুটি উপজেলা বা ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। কয়েকটা জেলা আছে যেখানে আগে থেকেই বন্যা চলছিল।” দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় দুর্ভোগে কুড়িগ্রামের মানুষ।
ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় দুর্ভোগে কুড়িগ্রামের মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, দেশের বিভিন্ন বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ৯৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ২০ হাজার পরিবারের পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় আট হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিয়াজ আহমেদ।
কমতে শুরু করেছে পানি; এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত কমছে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সাইফুল হোসেন। বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি বলেন, পানি খুব দ্রুত গতিতে কমেছে। “দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আশাতীতভাবে উন্নতি হচ্ছে। পানি যে দ্রুত গতিতে বেড়েছিল এবং যে উচ্চতায় চলে গিয়েছিল সেখান থেকে দ্রুত গতিতে কমতে শুরু করেছে।”তবে এখনও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি বলা যাবে না বলে জানান তিনি।
“দৃশ্যমান উন্নতি দেখতে হলে আরও দু-চারদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে আশার কথা হলো তারা উন্নতিটা দেখবে।” বন্যার পানিতে প্লাবিত কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা।
ঢাকার আশপাশে এখনও বন্যার কোনো শঙ্কা না থাকলেও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে পানি বেড়ে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
“রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুরে পানি বাড়ছে। এটা আরও দুই-তিন দিন থাকবে। তারপর সেসব এলাকার পানি কমবে।”
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এই তিন অববাহিকার মধ্যে গঙ্গার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের উজানের ভারতীয় অংশে এবং মেঘনা অববাহিকার ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশে পানি কমছে।
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার এবং সারিয়াকান্দি পয়েন্টে চার সেন্টিমিটার কমেছে।তবে এসব পয়েন্টে এখনও পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।
উত্তরের ধরলা, তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া ও ধরলা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে কমছে। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রামে ২২ সেন্টিমিটার কমেছে। তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে অপরিবর্তিত আছে, কাউনিয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমেছে।
যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জে চার সেন্টিমিটার, কাজীপুরে তিন সেন্টিমিটার, আরিচায় ১৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে।