বরুণ রায়ে’র নাতি সুধাংশু রায়-বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি !
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আদলে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন চৌধুরীর আসল নাম সুধাংশু রায়। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মিঠুন চৌধুরী নাম নেওয়া সুধাংশু রায় ১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করে এলাকা ছাড়ার পর মাঝেমধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন উৎসবে স্বল্প সময়ের জন্য এলাকায় আসতেন। ভারত ঘুরে এসে নিজের প্রকৃত নাম গোপন করে নতুন নাম নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল করেন তিনি। এ ঘটনায় এলাকাবাসীও বিস্ময় প্রকাশ করেছে। সুধাংশু রায়ের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুধাংশু রায়ের জীবন রহস্যে ঘেরা। তিনি নিজের বংশের উপাধি বদলে এখন চৌধুরী উপাধি ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশের কিংবদন্তি বাম রাজনীতিবিদ বরুণ রায় আত্মীয় না হলেও তিনি তাঁর নাতি বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তবে বরুণ রায়ের স্ত্রী শীলা রায় জানিয়েছেন, এ নামের কেউ তাঁদের আত্মীয় নন।
সরজমিনে সুধাংশু রায় ওরফে মিঠুন চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মরা পিয়ান নদীর তীরে তাঁর বাড়িতে দুটি টিনশেড ঘর আর একটি আধাপাকা কালী মন্দির। সাচনবাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রহিমাপুরের এই বাড়িতে মৃত হরেন্দ্র রায়ের স্ত্রী রেণুবালা রায় (৮৫) ও তিন ছেলের পরিবার নিয়ে থাকছেন, বাবুল রায় (৬০), হিমেন্দ্র রায় (৫৫) ও হিমাংশু রায় থাকছেন। সবার বড়ভাই বাবুল রায়(৬০) স্থানীয় সাচনা বাজারে ফলের ব্যবসা করেন, হিমেন্দ্র রায়(৫৫) স্থানীয় বাজারে ফেরি করে মালামাল বিক্রি করনে। হিমাংশু রায়(৪৫) সাচনা বাজারের মাদক সম্রাট ও চোরা কারবারি ,ইন্দ্রজিত রায় নামের এক ভাই বর্তমানে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সবার ছোট ভাই বিশ্বজিৎ রায় সেন্টু মাদক কারবারের অভিযোগে সম্প্রতি জেল খেটে বেরিয়েছেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করে সুনামগঞ্জের গোবিন্দগঞ্জ কলেজে ভর্তি হন সুধাংশু রায়। সেখানকার ভর্তি বাতিল করে এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
তবে সুধাংশু রায় দাবি করেন, পরে সিলেট ও কলকাতায় উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। কোন বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করেছেন জানতে চাইলে তিনি ‘কালচারাল’ বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করার দাবি করেন। পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, ২০০২ সালে বিটিভিতে ‘জীবন একটাই’ নামের একটি নাটক প্রযোজনা করে নিজের নাম মিঠুন চৌধুরী করেন সুধাংশু রায়। এর পর থেকেই তিনি নিজেকে মিঠুন চৌধুরী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সুধাংশু রায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী পরিষদ নামের একটি সংগঠন করে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা দেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর সুধাংশু রায় ওরফে মিঠুন চৌধুরী ভারতের বিজেপির আদলে বাংলাদেশ জনতা পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন।
তাঁর বাল্যবন্ধু রবীন্দ্র কুমার দাস, অমিতাভ দাস, বিদ্যুৎ দাস বলেন- সুধাংশু সম্পর্কে জামালগঞ্জের সবারই জানা, সে একেক সময় একেক অবতার রূপে আবির্ভাব হয়, ‘সুধাংশু আমরার প্রাথমিক ও হাইস্কুল জীবনের বন্ধু, তারে এই নামে আমরা চিনি। মিঠুন চৌধুরী নামে আমরা চিনি না। এসএসসির পর উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছে কি না আমাদের জানা নেই। ’ তবে আমার জানা মতে সে একটা হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ও পরে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে বড় একটা পদে ছিল,পরে ঐ কোম্পানি তার নামে মামলা ও করেছে যা এখনও চলমান।
সুধাংশু রায়ের মা রেণুবালা রায় বলেন, ‘আমার ফুয়া সুধাংশু ফোনে আমার খবর নেয়। অসুখবিসুখ অইলে চিকিৎসা করায়। হে কিতা খরে আমি জানি না। ’নাম পরিবর্তনের বিষয়ে মিঠুন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কলসিন্ধুর জমিদার ছিলাম। আমরা জাতে চৌধুরী। মামার বাড়ি এলাকায় স্থায়ী হয়েছি বলে আমরা রায় উপাধি গ্রহণ করেছি। আমার বাবার প্রকৃত পরিচয় জানার পর আমি চৌধুরী উপাধি নিয়েছি। ’এলাকা ছাড়ার পরই মিঠুন নামে তিনি পরিচিত বলে দাবি করেন। বিজেপি গঠনের আগে তিন মাস ভারতে অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সেখানের অনেক মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তাঁরা আমাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’রাজনৈতিক দল ঘোষণার পর তাঁর সঙ্গে অনেক দলের নেতারা যোগাযোগ করছেন জানিয়ে মিঠুন চৌধুরী দাবি করে বলেন, ‘আমরা আগামী দিনে নির্বাচন করে সরকার গঠন করব।’