আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পতাকা যে নায়িকা প্রথম উড়িয়েছিলেন তিনি ববিতা। দীর্ঘদিনের অভিনয়ে পথচলার স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক পেয়েছেন আজীবন সম্মাননাও। আজ কিংবদন্তি এ চিত্রনায়িকার জন্মদিন। বিশেষ এ দিনের পরিকল্পনা ও চলচ্চিত্রের সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি * আজকের দিনে বিশেষ পরিকল্পনা কী আপনার?
** বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। ছেলে পাশে থাকলে বেশ ভালো লাগত। গত বছরের মতো এবারও তাকে ছাড়াই জন্মদিন কাটাতে হচ্ছে। তাছাড়া গেল বছর ডিসিআইআই’র ছোট ছোট বাচ্চারা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল। তাদের নাচ-গান দেখে বেশ মুগ্ধ হয়েছিলাম। এবার সেই আয়োজনও নেই। একেবারেই নিজের মতো করেই দিনটি কাটাব।
* বিশেষ দিনে একাকিত্ব কী খারাপ লাগে না?
** ছেলে পাশে থাকলে আমার নিজেকে কখনওই একা মনে হয় না। তাছাড়া জীবনের অনেক সময় তো পার করে এলাম। সবাই তো আছেন। একা কোথায়! সবার ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে আছি। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।
* আমরা জানি ছেলেকে নিয়ে আপনার অনেক স্বপ্ন। তাকে কী কখনও অভিনয়ে দেখার ইচ্ছা জাগেনি মনে?
** অনিককে (ছেলে) নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়েছি। তাকে যে বিষয়টি সবচেয়ে অবাক করত, তা হল পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য। তাই যেখানে যখনই ঘুরতে গিয়েছি, ঘোরাঘুরি শেষে অনিক শুধু বই কিনতে চাইত। বই থেকেই নানা কিছু জানার চেষ্টা করত। অভিনয় তাকে কখনওই টানেনি। যে কারণে আমারও কখনও ইচ্ছা হয়নি তাকে অভিনয়ে দেখার।
* ব্যক্তিগত, সংগঠন কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অভিনয়ে অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেকবার। কখনও কি মনে হয়েছে প্রাপ্তির খাতায় আরও কিছু যোগ হতে পারত?
** কখনই না। কারণ, আমি যা পেয়েছি তাতেই সন্তুষ্ট। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি, বিভিন্ন সংগঠন থেকে সম্মাননা পেয়েছি, আজীবন সম্মাননা পেয়েছি, এক জীবনে একটা মানুষের আর কী পাওয়ার থাকতে পারে? সবার ভালোবাসা নিয়ে ক’জন মানুষ বেঁচে থাকতে পারেন?
* কিছুদিন আগেও একটি চ্যানেল থেকে অসাধারণত্বের সম্মাননা ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন….
** জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু জীবনের এ সময়ে এসে এমন পুরস্কারে মনের ভেতর কত যে ভালোলাগার সৃষ্টি করেছে তা সত্যিই ভাষায় প্রকাশের নয়। আমি একজন বাংলাদেশি হিসেবে সব সময়ই গর্ববোধ করি। সে সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্যাস্টিভ্যালে অংশ গ্রহণ করেছি সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য। আমি আমার দেশের পতাকাকে বিশ্বের দরবারে চিহ্নিত করেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
* দীর্ঘদিন আপনাকে চলচ্চিত্রে দেখা যাচ্ছে না। তবে কি অভিনয়কে একেবারেই বিদায় জানালেন?
** একজন শিল্পীর জীবনে গুডবাই বলে কোনো শব্দ নেই। শিল্পী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে পারেন। হয়তো পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে না চলতে পেরে দূরে থাকেন, সময় হলে আবার ফিরে আসেন। এটা ঠিক যে, আমাদের চলচ্চিত্রে বর্তমানে কিছুটা দুর্দিন যাচ্ছে। কিন্তু আমি দারুণভাবে আশাবাদী, চলচ্চিত্রে অবশ্যই সুদিন ফিরে আসবে। হয়তো সেই সুদিন ফিরে এলে গল্প আর চরিত্র ভালো লাগলে আমি আবার অভিনয় করব।
* আবার যদি জন্ম নেয়ার সুযোগ থাকে তাহলে কী হতে চান?
** অবশ্যই ববিতা। জানি সেই সুযোগ নেই। তবুও বলছি, বারবার ববিতা হয়েই এ বাংলাতেই জন্ম নিতে চাই। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এমন দেশটি আর কোথাও খুঁজে পাব না।
অভি মঈনুদ্দীন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn