হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী-সুনামগঞ্জ জেলার প্রান্তিক উপজেলা তাহিরপুর। উপজেলার যাদুকাটা নদীটি ঐতিহ্যমণ্ডিত ও সৌন্দর্যের আধার। স্থানটি পর্যটনসমৃদ্ধও। নদীটির পূর্ব তীরে শাহ আরপিনের মাজার এবং নদীর উত্তর তীরে পাহাড়ের গায়ে শ্রীঅদ্বৈত মহাপ্রভুর আশ্রম। চৈত্র মাসে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন এই দুই তীর্থস্থানকে ঘিরে উত্সবে মেতে উঠেন। হিন্দু নরনারীসহ নানা বয়সিরা যাদুকাটা নদীতে স্নান করে পুণ্য লাভ করেন। এই নদীর মাধ্যমে রোজগার করেন স্থানীয়রা। কিন্তু এই নদীর বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ায় এলাকাবাসী নানা সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন। তবে শ্রমিকরা ভেসে আসা কয়লা উত্তোলন করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ভারতের বিশাল খাসিয়া-জৈন্তার পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নেমে এসছে যাদুকাটা নদী। তাহিরপুরের বারেক টিলার পাড় ঘেঁষে নদীটি প্রবহমান। যাদুকাটা নদীটি দিনের বিভিন্ন সময় যেন যাদু বলে রূপ বদলায়। কখানো গাড় সবুজ রং ধারণ করে, আবার কখনো হালকা রক্তিম। বর্ষায় নদীর উন্মত্ততায় পিলে চমকে দেয়। আর হেমন্তে শান্ত হিমশীতল জলের কাছে চিকচিক বালুর দৃশ্য পর্যটকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। সেই আদিকাল থেকে যাদুকাটা নদী ছিল এলাকার মানুষের রোজগারের অবলম্বন। জেলেরা মাছ ধরত। আর শ্রমিকরা বালু-পাথর আহরণ ও বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু গত এক বছর থেকে সেই পথ বন্ধ।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় যাদুকাটা নদীসহ বিভিন্ন স্থানে বন্ধ রয়েছে বালু-পাথর উত্তোলন। পরিবেশ বিপর্যয় বন্ধে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আর এতে তাহিরপুরের কয়েক হাজার নর-নারীর উপার্জন বন্ধ। এলাকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত নদী যাদুকাটায় ভারতের ওপার থেকে পানির সঙ্গে ভেসে আসা কয়লার ছোট ছোট টুকরো ও কণা অনেকটা আশীর্বাদ হিসেবে মনে করছেন গরিব শ্রমজীবীরা। হিমশীতল পানিতে সরাদিন সাঁতার কেটে হাজার হাজার নরনারী, শিশু, যুবক কয়লা তোলে। ‘ছেলেমেয়ে নিয়া কষ্টে দিন কাটে। নদী বন্ধ হলে চুলা বন্ধ হয়ে যায়। এখন নিরুপায় হয়ে নদী থেকে কয়লা কুড়িয়েই বেঁচে আছি কোনোরকম’ বলেন মানিগাঁও গ্রামের নারী শ্রমিক দিলনাহার বেগম। শিক্ষার্থী রেজাউল মিয়া জানায়, স্কুল বন্ধ থাকায় নদীতে কয়লা কুড়াতে এসেছে সে। সারা দিনে ৩০০-৩৫০ টাকা রোজগার। এতে মা-বাবার সাহায্য হয়। কিন্তু পানি যে ভীষণ ঠান্ডা। ঐ শিক্ষার্থী জানালো—তার মতো আরো অনেক ছেলেমেয়ে নদীতে নেমেছে কয়লা কুড়িয়ে ভাতের পয়সা জোগাতে। শ্রমিকরা জানালেন, সবাই কয়লা ওঠাচ্ছে। এখন ওপর থেকে পানি আসছে না, তার সঙ্গে ভেসে কয়লাও আসছে না। তাই কত দিন কয়লা ওঠাতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কিত তারা । জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, যাদুকাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ। তাই যাদুকাটা নদীতে ভেসে আসা কয়লা জাল, বেলচা ও হাত দিয়ে কুড়িয়ে নিয়ে হাজারো শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারে আইনি সহায়তা করা হচ্ছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৫১ বার