বাস্তবে রূপ নিচ্ছে ছাতক-দোয়ারাবাসীর লালিত স্বপ্ন
ছাতকে সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদানের মাধ্যমে ছাতক-দোয়ারাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। সুরমা সেতু নির্মাণ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে বিদ্যমান আশা-নিরাশার দোলাচল কেটে গেছে এ কার্যাদেশ প্রদানের মধ্য দিয়ে। গত ২২ আগষ্ট সেতু মন্ত্রনালয়ের উপসচিব (জিএফডিপি) সৈয়দা সালমা বেগম স্বাক্ষরিত ছাতকের সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ৩০ কোটি ৪৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ১৭৪ টাকা ব্যয় ধরে সেতুর নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ‘মেসার্স জন্মভুমি নির্মাতা’ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের মুল পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে। সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের দাবীর প্রেক্ষিতে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সেতু নির্মাণের প্রাক্কলন তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ক্ষমতাসীন হলে আবারো ২০০৪ সালে শহরের শ্যামপাড়া ও নোয়ারাই ইউনিয়নের বারকাপন এলাকায় সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করে।ছাতকে দলের এক জনসভায় এসে এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনকে সাথে নিয়ে সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি সরকার একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে জানুয়ারীতে এর নির্মাণ কাজ শুরু করে।
কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর উভয় তীরে চারটি পিলার নির্মাণ করাই ছিল সেতুর সর্বশেষ কাজ। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেতু নির্মাণে ব্যাপক অসংগতি রয়েছে ঘোষনা দিয়ে প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বাতিল করে দেয়। বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে এ সেতুটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্যে আবারো উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্যে এপ্রোচ ও নেভিগেশনসহ পূর্ণ-পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রীজ নির্মাণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি সংশোধিত নতুন প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এ আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় এনে ১শ’ ১২ কোটি ৯৯ লাখ ৪৯ টাকার পুনঃ সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
২০১৬ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পরিকল্পনা অনুযায়ী সুরমা সেতুর নির্মান কাজ দ্রুত বাস্তায়নের জন্যে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বক্তব্য দেন। এ দাবীর প্রেক্ষিতেই অক্টোবর মাসে পরিকল্পিত এপ্রোচ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেতু নির্মাণে ১শ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)’র সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদনের প্রায় ১০ মাস পর সেতুর কার্যাদেশ প্রদান করা হলে ছাতক-দোয়ারার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ছাতকে সুরমা নদীর উপর সেতুর নির্মাণ পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে। কিন্তু বিএনপি ক্ষতায় এসে মেয়াদের শেষ পর্যায়ে নির্বাচনী ফায়দা নিতে তড়িগড়ি করে পরিকল্পনা ছাড়াই সেতুর খাম্বা প্রস্তুত করে দায়িত্ব শেষ করেছে। পরিকল্পনায় অসংগতির কারনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। বর্তমান সরকার জনগনের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সুরমা সেতুটি বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছে। ২২ আগস্ট ছাতক-দোয়ারাবাসীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।