বেড়েছে মেডিকেল কলেজ। সেই সঙ্গে প্রতি বছরই বাড়ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এমবিবিএস চিকিৎসক (ডাক্তার)।দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় এ বৃদ্ধির হার আশাব্যঞ্জক। তবে এসব প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকের গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেডিকেল কলেজ অনুসরণ করছে না বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা। আর এই নীতিমালার মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক কার্যক্রমের গুণগত মান। এছাড়া মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে অনেক কলেজে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাতটি মৌলিক বিষয়- অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, ফার্মাকোলজি ও প্যাথলজির কোনো শিক্ষক। আবার কোথাও কোথাও শিক্ষক থাকলেও তারা মানসম্পন্ন নন।
শুধু তাই নয়, কয়েকটি সরকারিসহ অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নেই উপযুক্ত ছাত্রাবাস, গ্রন্থাগার এবং আধুনিক সরঞ্জাম সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি। আর অনেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত রোগীও। এতে প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।সব মিলিয়ে এভাবে জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষাজীবন পার করে কোনোভাবে ভালো চিকিৎসক হওয়া সম্ভব নয়। আর এসব চিকিৎসকরা যখন চিকিৎসাসেবা দেবেন, সেখানে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণেই মানসম্পন্ন না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত ১০৫টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ১৩টিকে এখনও নিবন্ধন দেয়নি বিএমডিসি। পাশাপাশি মান বজায় রাখতে না পারায় ১০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে মন্ত্রণালয়।এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, মানহীন কলেজ বন্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারছে না, তাদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। যদি তারা সব শর্ত পূরণ করে মানসম্মত কলেজে উন্নীত হতে না পারে, তবে আগামীতে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।তিনি বলেন, চিকিৎসক নির্মাণের কেন্দ্র মেডিকেল কলেজগুলোতে মানের ঘাটতি সরকার কোনোভাবেই মেনে নেবে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ নীতিমালা সংক্রান্ত এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর প্রথম ২০ বছরে দেশে মেডিকেল কলেজ ছিল ৯টি। এর মধ্যে ছিল সরকারি ছয়টি ও বেসরকারি তিনটি। এরপর ১৯৯২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আরও ৪৯টি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দেয়া হয়। এ মুহূর্তে দেশে ১০৫টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৩১টি, বেসরকারি ৬৯টি এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ৫টি। এসব কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫২ হাজারের বেশি।বিএমডিসির এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মোট শিক্ষক পদের প্রায় ৬৩ শতাংশই শূন্য। বিএমডিসির মানদণ্ড অনুযায়ী, ৩১টি সরকারি মেডিকেল কলেজে কমপক্ষে ৮ হাজার ৩০০ শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে রয়েছে ৩ হাজার ৪৬ জন। আর ৬৯ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ৬২টি কলেজে শিক্ষক আছেন ৬ হাজার ৩৫৭ জন। কিন্তু বিধান অনুযায়ী থাকা প্রয়োজন অন্তত ১৭ হাজার ৫০০ জন। বাকি সাতটির হিসাব সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দিতে পারেনি।এছাড়া ঢাকা মেডিকেল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ ২৩টি সরকারি মেডিকেলে ৩২৯৫টি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক পদের মধ্যে ১২৩৬টি শূন্য আছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ হিসাবে জানা গেছে। পাশাপাশি ৩১টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ১২৭টি এনাটমি শিক্ষক পদের মধ্যে ৮৪টিই শূন্য। ৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এনাটমি বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) মানসম্পন্ন মেডিকেল শিক্ষার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এ অনুযায়ী, কোনো কলেজে প্রতিবছর যদি ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন, তাহলে সেখানে অন্তত ১৯৮ শিক্ষক প্রয়োজন। আর ১০০ জন হলে শিক্ষক থাকতে হবে ২৯৩ জন, আর ২০০ জন ভর্তি হলে শিক্ষক থাকতে হবে প্রায় ৪০০। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ছয় বছরে দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী এমবিবিএস পাস করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সংখ্যায় বাড়লেও এসব চিকিৎসকদের গুণগত মান বাড়েনি। বিএমডিসির নীতিমালা অনুযায়ী, যেখানে একটা মেডিকেল কলেজে একটি বিষয়ে ১৫ জন শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে অধিকাংশ কলেজে রয়েছে একজন বা দু’জন। যেসব বিষয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে ভালো আয়ের সুযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় মোট আসনের বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি আবেদন পড়লেও উল্লিখিত মৌলিক সাত বিষয়ে আবেদনের সংখ্যা খুবই কম।
এ বিষয়গুলোর দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোর প্রাইভেট প্র্যাকটিস বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ অপেক্ষাকৃত অনেক কম। আর এ কারণেই জুনিয়র চিকিৎসকদের কেউ কেউ এসব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করলেও শিক্ষকতা পেশায় আসার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখান না। বিএমডিসির রেজিস্ট্রার জাহিদুল হক বসুনিয়া বলেন, মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় দেশের সব মেডিকেল কলেজ এখনও বিএমডিসির নিবন্ধন পায়নি। মানসম্পন্ন চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিতে অবশ্যই বিএমডিসি নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে বিএমডিসি। তবে মানবিক কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কখনও কখনও নমনীয় আচরণ করে থাকি।
দেশের চিকিৎসা শিক্ষার এ অবস্থা প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সিনিয়র উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, জনসংখ্যার অনুপাতে নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিবেচনায় এনে চিকিৎসক তৈরি করতে হবে। এখানে ইচ্ছামতো মেডিকেল কলেজ খুলে যেনতেনভাবে পড়িয়ে চিকিৎসক তৈরি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। মেডিকেল শিক্ষার্থী ভর্তি এবং চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে এখনই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।
দেশের বর্তমান মেডিকেল চিকিৎসার প্রধান সমস্যা হিসেবে শিক্ষক স্বল্পতাকে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব মেডিকেল কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংকট রয়েছে। তাছাড়া আমাদের পাঠ্যক্রমে নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান, কথোপকথন দক্ষতা এগুলো সন্নিবেশিত করে তা গুরুত্বসহকারে পড়ানো উচিত যা একেবারেই হচ্ছে না।তিনি বলেন, চিকিৎসা শিক্ষার মানের ওপরই ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের পেশাদারিত্ব ও সেবার মান নির্ভর করে।
কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ :-
সাতক্ষীরা: শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে ৫২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সরকারি)। এই কলেজ প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী তিন শতাধিক শিক্ষকসহ ৫৬০ জন জনবল নিয়োগের কথা। কিন্তু সেখানে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৭৭টি। এর মধ্যে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫০ জন। এ ছাড়া সৃষ্ট ২২টি কর্মচারী পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১২ জন। এছাড়া আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করছে আরও ৪৬ জন। কলেজ অধ্যক্ষ ডা. কাজী হাবিবুর রহমান জানান, এরই মধ্যে প্রথম ব্যাচের ২৯ জন পাস করে ডাক্তার হয়েছেন। প্রথম ব্যাচের ২১ জন শিক্ষার্থী সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
তিনি জানান, মেডিকেল কলেজের ১৯টি বিভাগের প্রতিটিতে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, দু’জন সহকারী অধ্যাপক প্রয়োজন হলেও এখানে নেই। ফিজিওলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, রেডিওলজি ও ইমেজিং এবং নেফরোলজি বিভাগে কোনো শিক্ষক নেই। অন্য বিভাগে ১-২ জন করে থাকলেও তা এতটাই অপ্রতুল যে কাজ চালানো দায়। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া ট্রান্সফিউশন মেডিসিন এবং সাইকোলজি বিভাগের কোনো ডাক্তার নেই। ইন্টারনাল মেডিসিন ও কার্ডিওলজিতে মাত্র একজন করে ডাক্তার রয়েছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. রোকনুজ্জামান  জানান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় তাদের ওয়ার্ড ক্লাস করতে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যেতে হয়। প্রাকটিক্যাল ও ইন্টার্ন ক্লাসের জন্যও যেতে হয় সেখানেই। অপর শিক্ষার্থী রামপ্রসাদ দাস জানান, এমনিতেই শিক্ষক কম। যারা আছেন তারাও সপ্তাহে এক অথবা দু’দিন এসে দায়িত্ব শেষ করেন। পেশাগত জীবনে গিয়ে তাদের এসব নিয়ে ভুগতে হবে। আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, এখনও হোস্টেল পুরাপুরিভাবে নির্মিত হয়নি।
রাঙ্গামাটি: প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি শুরু হয় রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের (সরকারি) শিক্ষা কার্যক্রম। শহরের উত্তর কালিন্দীপুরে অবস্থিত রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের পাঁচ তলাবিশিষ্ট করনারি ভবনে স্থাপন করা হয় এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস।শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এ মেডিকেল কলেজের বর্তমানে আবাসন সমস্যা, হোস্টেলে পানির সংকট এবং যাতায়াত ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে। শিক্ষক সংকট প্রকট না হলেও ফরেনসিক বিভাগে শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বিভাগটির কার্যক্রম। কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতানসহ শিক্ষকরা জানান, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রশাসনিকসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বর্তমানে অধ্যক্ষসহ ৪৫ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। চলমান তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সকালে একটি শাখা হাসপাতালে এবং বিকালে অন্যদের নিয়ে কক্ষে কোনো রকমে শ্রেণী ও পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চতুর্থ ব্যাচ ভর্তির পর আর স্থান সংকুলান হবে না। তারা জানান, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য শহরের রাঙ্গাপানির হ্যাচারি এলাকায় ২৬ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। একাডেমিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাবনা) পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায়। আবাসন সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য যথাক্রমে ৩০ এবং ৪০ আসনবিশিষ্ট দুটি হোস্টেল নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। তবে নির্মাণ শেষ হলেও ৪০ আসনের হোস্টেলটিতে পাহাড় ধসের ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় কেন্দ্র খোলায় তা ব্যবহার করতে পারছি না। রাঙ্গামাটি যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের ছাত্র হোস্টেল ভাড়া নিয়ে সেখানে ৫০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ক্যম্পাস থেকে দূরে হওয়ায় যাতায়াত সমস্যা হচ্ছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তন্ময় চৌধুরী ও সুমাইয়া বিনতে মিম বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় আমাদের সংকট অনেক। হোস্টেলে পানির খুব সংকট, পুরো হাসপাতালসহ একটি মাত্র টিউবওয়েল। পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও হাসপাতালের সঙ্গে। মেয়েদের হোস্টেলে লাইট ও পাখার সমস্যাও। হাসপাতালের পুরনো ভবনে করা হোস্টেলের ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে যায় ভেতরে। তারা সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত পড়ালেখার জন্য দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি করেন।
গাজীপুর:গাজীপুর সিটি মেডিকেল কলেজে (বেসরকারি) শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ইটাহাটা এলাকায় অবস্থিত এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা ক্লাসবর্জন, অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দুই বছরের অনুমোদন থাকলেও পরবর্তী তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নেই। একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য যে ধরনের অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার তার কিছুই নেই এ কলেজে।ভর্তির সময় সব রকম সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্থাপনার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কিছুই নেই। বিশেষ করে হাতে-কলমে কাজ করে শিক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা খুবই সীমিত। জানা গেছে, শর্ত পালন না করায় গত দুই শিক্ষা বছর ধরে ৩য়, চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী ভর্তি ও একাডেমিক কার্যক্রমের অনুমোদন বা রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি দেয়নি। এতে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ কলেজে নেপাল ও ভারতের অন্তত ২৭ জন শিক্ষার্থীসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, বিপুল অর্থ ব্যয় করে এ মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করলেও অন্য মেডিকেল কলেজগুলো থেকে তারা অনেক পিছিয়ে। এখানে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষক নেই। হাতে-কলমে শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।এ ব্যাপারে কলেজ সেক্রেটারি অশোক কুমার রায় বলেন, বিএমডিসি এ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দুই বছর ছাড়া অন্য শিক্ষাবর্ষের জন্য অনুমোদন না দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৩-২০১৪ এবং ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়েছে। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর বিএমডিসি তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে শর্ত পালন করে কলেজটি দেশের প্রথম শ্রেণীর মেডিকেল কলেজে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn