বিষাদের সঙ্গে জীবণের সহবাস
আকসার আহমদ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেঃঃ দিনমান শেষে বিদায়-বিষন্নতা মেখে বেলা যখন হাসি হাসি মুখ করে বলে– ‘এবার তাহলে আসি’। তখন স্যাঁতসেঁতে মনের তীরে আঁছড়ে পড়ে অতলান্ত শূন্যতার অথৈই আঁধার। কালের জীর্ণশীর্ণ শরীর চুঁইয়ে তখন তির তির করে নেমে আসে ফেলে আসা দিনের হরেক ছবি। আগে ছিল, এখন আর নেই’ এর এক অদ্ভুত অব্যক্ত অনুভূতি। সন্ধ্যা যেন অনিশ্চিত আগামীর অনঙ্কিত কাব্যের এক চিরচেনা কবি। যিনি মৌনতার মনোহর মাখিয়ে বিষাদের তুলিতে এঁকে যান বিরহের ছবি। স্মৃতি তাড়িত কিছু ছবির রং কেবলই হাসির বৈচিত্র দিয়ে ঘেরা। আর কিছু, চোখের অমন্থিত কান্নার জলে ভেজা। তবু সব স্মৃতির কঙ্কালেই বাজে বেদনার একই সুর । কোন অতিথি অবসরে ফোঁকলা হাসিতে লুটিয়ে পড়ে মনে এদেরই কেউ কেউ।
আর কিছু পড়ে থাকে সন্ধ্যার স্বপ্নহীনতায় মৌনতার চাদর মুড়ে। ফেলে আসা সুখ ও দুখের প্রতিটি ক্ষণই নিখাদ কষ্ট দিয়ে গড়া, যা নিভৃতে স্মৃতির সদর দিয়ে বদর বদর করে ঢুকে ভেঙ্গে পড়ে শ্রাবণের প্লাবণ ধারায় অবগুন্ঠিত মনের উপর। উৎসে নাম ও কালের ভিন্নতা থাকলেও মিলন মোহনায় এরা সকলেই এক ও অভিন্ন। তারা একই কষ্টের অনিঃশেষ স্রোতধারা। সারা দিনমান ব্যাপী নিজের জীবণের ক্লান্তিহীন আয়োজন শেষে প্রতি সন্ধ্যায় পালা করে দেখতেই হয় দিন শেষের বিদায়ের বিষন্ন আয়োজন। আর এই সন্ধ্যার হাত ধরেই কেন যে এত তীব্র হয়ে ফিরে আসে জীবণের সব দুঃসহ ছবি ! ফিরে আসে অজানা আগামীর অবুঝ অনুভূতি ! দুর্বোধ্য অনুভূতির জোঁয়ারে ভেসে যায় পুরো গোধূলি লগন। সন্ধ্যার নাম ধরে দিবারাত্রির প্রতি সন্ধিক্ষণে মৃত্যু এসে যেন কানে কানে বলে যায়– ‘আমি কিন্তু আসবই’। জানি না এমন আর কারো হয় কি না। একেকটি সন্ধ্যা যেন একেকটি বিদায়েরই করুণ মহরত। হাবিজাবি ভাবনার ভার বইতে বইতে সহসাই মন যখন বিদ্রোহী হয়ে উঠে, তখন অবদমিত আক্রোশে বলে উঠে সে– ধুর ছাই ! সব কিছু মিথ্যে, সাকুল্যে মিথ্যে। মায়া, মরিচিকা, বিদায় আর বিষাদের সঙ্গেই কেবল জীবণের সহবাস।