ভারতের আইপিএলকে ঘিরে দেশে জুয়ার আসর
‘এই বলে ওয়ার্নারের চার হবে। ২০ টাকা। কে আছে?’ আরেকজন বলল, ‘চার হবে না। ঠিক আছে ২০। ’ আরেকজন বলল, ‘ওয়ার্নার আউট। ৫০ টাকা, কেউ আছে? ঠিক আছে দুজনের লগেই…। ’ উপরের কথোপকথন গুলো রাজধানীর খিলক্ষেতের আমতলা এলাকার একটি চায়ের দোকানের বেশকিছু আইপিএল দর্শকের। এভাবেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইপিএলকে ঘিরে শুরু হয়েছে জুয়ার আসর।আর এসব জুয়াড়িদের মাধ্যমে হাতবদল হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার বিভিন্ন ক্লাব কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও প্রকাশ্যেই চলে এই জুয়া। আর এই জুয়ার টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে হামলা, সংঘর্ষ এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
আইন বলছে, খেলার নামে এমন জুয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন (১৮৬৭ সালে প্রণীত) অনুযায়ী, যেকোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। তবে আইপিএল জুয়া বন্ধে প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই। মফস্বলে মাঝেমধ্যে দু-একটি অভিযান হলেও ঢাকায় জুয়া বন্ধে সচরাচর পুলিশের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
গত বছর জুয়ার কয়েকটি অনলাইন ওয়েবসাইট বন্ধ করা হলেও এখনো সেগুলো প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে চালু রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, সুর্নিদিষ্ট তথ্য পেলে তারা জুয়ার আসরে অভিযান চালান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘যখন খেলা অর্থের দিকে চলে যাচ্ছে তখন এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজে। কারণ বাজিতে একটি পক্ষকে হারতে হয়। তাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বড় ক্ষতির মুখে পড়ে আত্মহত্যার মতো ঘটনা আছে। টাকার জন্য অন্য অপরাধও হতে পারে। এই ক্ষতিকর প্রবণতা রুখতে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে। ’
ক্রিকেট ঘিরে জুয়া খেলা হয়- গত বছর এমন ১২টি ওয়েবসাইট শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এরপর সেগুলো বন্ধ করে দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনকে (বিটিআরসি) লিখিতভাবে জানায় ডিএমপি। পরে ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে প্রক্সি সার্ভার দিয়ে এখনো সাইটগুলোতে ঢোকা যাচ্ছে এবং অবাধে জুয়া খেলাও চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘যদি অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে দিয়ে লেনদেন হয় তাহলে তা মানি লন্ডারিং আইনের (মুদ্রাপাচার) মধ্যে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’ ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘জুয়ার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। আইপিএল বা ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে। ’