আইনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও উপাচার্য ছাড়াই চলছে দেশের ২৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই। এভাবে শীর্ষ পদগুলো শূন্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন না মানা ও আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় তদারকির প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। উচ্চ শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের সনদে স্বাক্ষর করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত উপাচার্যের; কিন্তু উপাচার্য না থাকায় এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণরা মূল সনদ নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ড নিয়োগকৃত অস্থায়ী উপাচার্য মূল সনদে স্বাক্ষর করছেন। যার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। জানা গেছে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্য নেই চার বছর ধরে। শুধু উপাচার্য নয়, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষও নেই। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের সনদে স্বাক্ষর করছেন বর্তমান ভিসি, যিনি রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত নন। এসব শিক্ষার্থীর সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্রস্তাব জমা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখনো উপাচার্য পায়নি তারা।
যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই: গণবিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, জেএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স, ফরিদপুরে প্রতিষ্ঠিত টাইমস ইউনিভার্সিটি, গাজীপুরে অবস্থিত জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বরিশালে অবস্থিত গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে ৩টি, মানিকগঞ্জের এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম। এর বাইরে উপাচার্য না থাকা আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ১৫ মে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে, ১৩ নভেম্বর প্রস্তাব জমা দিয়েছে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ২৪ নভেম্বর কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১৩ জুলাই, বিজিসি ট্রাস্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছে ৩০ অক্টোবর, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি জমা দিয়েছে ৩ অক্টোবর ও ১১ নভেম্বর প্রস্তাব জমা দিয়েছে রয়েল ইউনিভার্সিটি। এছাড়া সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৭ ডিসেম্বর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার উপাচার্যের হলেও দেশের ২৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদটি শূন্য। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য নেই, এমনকি উপাচার্য নিয়োগে আগ্রহও নেই। গত ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উপাচার্য না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করে। গত বছরের নভেম্বরে ইউজিসি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির মূল সনদ উপাচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত হতে হবে। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চার বছর মেয়াদে প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেবেন। কাজেই উক্ত পদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া আইনের পরিপন্থি। রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে ২০১৩ সালে। ৫ বছরেও উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এ বি এম রাশেদুল হাসান বলেন, অতিদ্রুত উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্যানেল প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় রয়েছে কুইন্স ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের মধ্যে আইন না মানা এবং আইনকে চ্যালেঞ্জ করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তারা আইনতো মানেনই না বরং চ্যালেঞ্জ করেন। এটা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাধা। তাদের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগে অনীহা রয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান। ইউজিসির চেয়াম্যান আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের সনদে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকৃত উপাচার্যের স্বাক্ষর করার আইন রয়েছে। উপাচার্য ছুটিতে গেলে উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া এবং পরবর্তীতে কোষাধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম রয়েছে; কিন্তু উপাচার্য ছুটিতে গেলে ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্যকে দায়িত্ব দেন। এটা অনিয়ম। আর এই অনিয়মই চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn