ভয়ঙ্কর সুমির টার্গেট ধনী পরিবার
আটাশ বছরের নারী সুমি বেগম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিনি বুয়ার কাজ করেন। তার কথা-বার্তায় ও আচরণে মনে হবে তিনি খুবই ‘আলাভোলা’ নারী। আসলে তিনি কোনো সাধারণ নারী নন, রীতিমতো ভয়ানক। এই নারীর ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশ। সুমি সব বাসায় কাজ করেন না। রাজধানীর অভিজাত এলাকা ও ধনী পরিবারে তিনি বুয়ার কাজ নেন। সুঁই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বাসা থেকে বের হন তিনি। লুটে নেন সর্বস্ব।
পুলিশ এ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে, বাসা-বাড়ির লোকজনকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়াই তার নেশা ও পেশা। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে লুট করা ৭ ভরির কিছু বেশি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার হয়েছে। সবশেষ রাজধানীর অদূরে সাভারের আমিনবাজার থেকে কাজের বুয়া হিসেবে কাজ করা অবস্থায় চাকরিজীবী দম্পতির দুই সন্তানকে ঘরের ভেতর আটকে রেখে স্বর্ণালঙ্কার লুট করেন সুমি। পুলিশ তাকে ১২ জুলাই দিবাগত রাতে সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার মহাজনপুর গ্রাম থেকে আটক করে।
আমিনবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।এসআই জামাল হোসেন জানান, ৩ মাস আগে আটক হওয়া সুমি বেগম আমিনবাজারের মেডিকেলের কাছে রুহুল আমিনের বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে কাজ শুরু করেন। সুমির আচার-ব্যবহারে অল্পতেই বিশ্বাস করেছিলেন রুহুল আমিন। তিনি সরকারি চাকরিজীবী, তার স্ত্রীও সেখানকার হাসপাতালের নার্স। দুই সন্তানকে তার কাছে রেখেই তারা কর্মস্থলে যেতেন। এরই এক পর্যায়ে গত ১০ জুলাই সুমি রুহুল আমিনের দুই সন্তানকে ঘরে আটকে রেখে বাসার স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রুহুল আমিন থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। পরে তাকে সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার মহাজনপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে ওই বাসা থেকে লুট করা ৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। সুমি বেগমের স্বামী মোশারফ হোসেন মোশা। মোশার ৪ স্ত্রীর মধ্যে সুমি ৪ নম্বর।
সুমিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সুমি রাজধানী ঢাকার অভিযাত এলাকা- গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজের বুয়া হিসেবে কাজ করতেন। কৌশলে তিনি বাড়ির মালিক কিংবা তার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচারণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। এরই এক পর্যায়ে তিনি বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিস চুরি করে পালিয়ে যান গ্রামে। কিছুদিন পর ফের ঢাকায় ফেরেন। একবার যে এলাকায় চুরি করেন, দ্বিতীয়বার তিনি সেখানে যান না। সুমির গ্রামের লোকজনের বরাত দিয়ে এসআই জামাল হোসেন বলেন, সুমির স্বামী মোশা এলাকায় কোন কাজ করেন না। সুমি দুই-তিন মাস পরপর ঢাকায় আসেন। তবে ঢাকায় এসে কী কাজ করেন, সেটি এলাকার লোকজন জিজ্ঞেস করলেও বলতেন না সুমি। তার বিরুদ্ধে অন্য থানায় কোন মামলা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। কাজের বুয়া নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কাজের বুয়া নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ওই নারীর ভোটার আইডি কার্ড, মোবাইল নম্বর, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সনদ ও তার পরিচিত কিংবা আত্নীয় স্বজনের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ রাখলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।