মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না যাদের, তারাও এখন বাড়ির মালিক
ছিমছাম গোছানো সারি সারি পাকা ঘর। প্রতিটি ঘরের সামনে বারান্দা। রয়েছে হাঁটার জায়গা। ছাতকে এতদিন যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না তাদের হাতেই উঠেছে এসকল স্বপ্নের বাড়ির চাবি। সুনামগঞ্জের ছাতকে ভূমিহীন, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে এই ঘরগুলো। যা একেকটি পরিবারের স্বপ্ন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে নির্মিত এই ঘরগুলো কেবল আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী রোববার (২০ জুন) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ১শত ৬৫ পরিবার পাচ্ছেন স্বপ্নের নতুন ঠিকানা। গৃহহীন পরিবারের জন্য সরকারি খাস জমিতে গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন গৃহহীন পরিবারগুলো তাদের স্বপ্নের ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এ উপহার পেয়ে খুশি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারগুলো।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত বাড়ির কাজ শেষে হয়েছে। উপকারভোগীদের একজন আনোয়ারা বেগম জানান, একদিন এলাকায় মাইকের শব্দ কানে এল। বলা হচ্ছিল, যাদের জমি নাই, ঘরও নাই তাদের ঘর দেওয়া হবে। তাদের নির্ধারিত দিনে উপজেলা ভূমি অফিসে নামের তালিকা জমা দিতে বলা হয়। আমি এই সংবাদ পেয়ে আমার নাম জমা দেই। এরপর আমাকে জানানো হয় আমি ঘর পেয়েছি। আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। আমরা ভীষণ খুশি। শেখ হাসিনা মাথাগোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন।
শুকুর আলী নামের আরেক বৃদ্ধ খুশিতে কান্না জর্জরিত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাড়ি পেয়ে আমি খুব খুশি। আমি কখনও ভাবিনি নাই ইটের পাকা বাড়ি পাবো। শেখ মুজিবের বেটি শেখ হাসিনা’র কারণে পাকা ঘর পেয়েছি, আল্লাহ শেখ হাসিনাকে সুস্থ রাখুক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান করে সেই জমির ওপর ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি গৃহের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী সবগুলো ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এসব গৃহে দুটি সেমিপাকা ঘর, রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট, ইউটিলিটি স্পেস, বারান্দাসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। প্রত্যেক সুবিধাভোগীর নামে সরকারি ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক দলিল রেজিস্ট্রেশন, নামজারি সম্পন্নকরণ ও গৃহ প্রদানের সনদ হস্তান্তর করা হবে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান জানান, প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক তাদের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ কাজ প্রকল্পের ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগামী ২০ জুন ২০২১ উপকারভোগীদের গৃহ হস্তান্তর করবেন। এরপরেই অসহায় গৃহহীন পরিবারগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক জানান, এ উদ্যোগটি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বিশ্বের ইতিহাসে নতুন সংযোজন। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে এরচেয়ে বড় এচিভমেন্ট আর নেই।