মাহফুজে মুগ্ধ তসলিমা নাসরিন!
নিজ মালিকানাধীন চ্যানেল এটিএন বাংলায় প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে গান গাইলেন মাহফুজুর রহমান। তার গানের গলা ও কথা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন অনেকে। তবে এই ঝড়ের পুরোটাই সমালোচনা তথা নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে। অনেকে বলছেন, গান গাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকা সত্বেও মালিকানার জোরে এটিএন বাংলায় গান গেয়েছেন তিনি। অনেকে আবার এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার স্ত্রী ইভা রহমানের গান নিয়েও টানাটানি করেছেন। তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মাহফুজুর রহমানের গান গাওয়ার কিছু ইতিবাচক দিকের অনুসন্ধান করেছেন তিনি এবং গুনে গুনে তিনি পাঁচটি দিক পেয়েও গেছেন। নিচে তুলে ধরা হলো তসলিমা নাসরিনের পুরো স্ট্যাটাসটি-
“ফেসবুকে বাংলাদেশের মানুষ কাল থেকে হাসছে। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। কারণ এটিএম চ্যানেলের কর্ণধার মাহফুজুর রহমান গান না জেনেই গান গেয়েছেন চ্যানেলে।বাজে লিরিক, বাজে সুর, বাজে কণ্ঠ। টাকা আছে বলে টপ মডেলদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন। গানের কথার সঙ্গে মিলিয়ে হাত পা নেড়েছেন, সোজা কথায় আউটডেটেড। সব মানছি। কিন্তু কিছু পজিটিভ জিনিস ভাবছি।
১। কোটিপতিরা টাকা কামানোর ধান্দায় থাকে্ন। মদ আর ‘মেয়েমানুষ’ নিয়ে প্রমোদ তরী ভাসান। দূর্নীতি দুষ্কর্ম এত করেন যে পাবলিকের সামনে পারতপক্ষে আসেন না। তাঁদের গান গাওয়ার শখ টখ থাকে না। এই লোকটি শিল্প সাহিত্যে মন প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন। ইনি আর সব কোটিপতির চেয়ে ভিন্ন।
২। গানের কথাগুলো সবই কোনও নারীকে নিয়ে, যাঁকে তিনি খুব ভালোবাসেন। তাঁর সব গানই ভালোবাসা আর বিরহের গান। কোনও নারীকে ভালোবাসেন তিনি, যাঁকে খুব মিস করছেন, যাঁকে ফিরে আসতে বলছেন। যাঁকে ছাড়া তাঁর কিছু ভালো লাগছে না। সেই নারীর সঙ্গে ছিল তাঁর সুখের জীবন। সেই সুখের জীবন এখন আর নেই তাঁর। ফিলদি ধনীরা সাধারণত এমন স্বীকারোক্তি করে না। তাদের এক গেলে আরেক আসে। কারো জন্য তারা কাঁদে না। এই লোকটি ভিন্ন। লোকটি প্রেমিক। উদার। সংবেদনশীল।
৩। ধনীদের অনেক রকম স্বপ্ন বা সংকল্প থাকে। কোনও প্রাসাদ বা কোনও জাহাজ বা কোনও ক্যাসিনো কিনে ফেলা। বা বিশাল কোনও জুয়োয় জিতে যাওয়া বা কাউকে ঠকানো, বা কোনও জাতশত্রুকে খুন করা। কিন্ত এই লোকটি ওসব কিছু চাইছেন না, তাঁর নিজের চ্যানেলে একটু গান গাইতে চেয়েছেন, এই যা।
৪। লোকটি ভাল গান গাইতে পারেন না বলে সুটিঙ বা এডিটিং-এর সময় তাঁর কর্মচারীরা নিশ্চয়ই তুমুল হেসেছে। তিনি তাদের হাসির শব্দ শুনতে পাননি। তাঁকে নিশ্চয়ই মিথ্যে প্রশংসা করে বোকা বানানো হয়েছে। এত প্রতাপশালী হয়েও মানুষ যে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করছে তা বুঝতে পারছেন না। বড় সরল সোজা তিনি, বড় সাদাসিধে।
৫। গান গাইতে জানেন না, তারপরও আবেগ তাঁর এত বেশি যে তর সইলো না। গেয়ে দিলেন। একটুও ভাব্লেন না লোকে যে মন্দ বলবে। এর মানে তাঁর ইমোশান মাত্রাছাড়া। এত ইমোশান ফিলদি ধনীদের সাধারণত থাকে না। তারা বুঝে শুনে চিন্তা ভাবনা করে প্রতিটা স্টেপ ফেলে।