মুক্তামণি চলেই গেল
রক্তনালিতে টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণি মারা গেছে। আজ বুধবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে বাবার কাছ থেকে পানি চেয়ে পানি পান করার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। বাদ জোহর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। সাতক্ষীরার কামারবাইশালের মুদির দোকানদার ইব্রাহিম হোসেনের দুই যমজ মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। জন্মের দেড় বছর পর থেকে মুক্তামণির সমস্যা শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তা ফুলে কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। মুক্তামণি বিছানায় বন্দী হয়ে পড়ে। সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা চিকিৎসা চলে। তবে ভালো হয়নি বা ভালো হবে, সে কথা কেউ কখনো বলেননি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনায় আসে মুক্তামণির খবর। গত বছরের ১১ জুলাই মুক্তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে বার্ন ইউনিটের কেবিনে ছিল ছয় মাস। গত বছরের ১২ আগস্ট তার হাতে অস্ত্রোপচার হয়। তার ডান হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ করেন চিকিৎসকেরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তাঁর হাতে লাগানো হয়। তবে সাময়িকভাবে হাতের ফোলা কমলেও তা সম্প্রতি আগের চেয়েও বেশি ফুলে গিয়েছিল। রক্ত জমতে থাকে ফোলা জায়গায়। আর ড্রেসিং করতে কয়েক দিন দেরি হলেই হাত থেকে দুর্গন্ধ বের হতো। আগের মতো হাতটিতে পোকাও দেখা যায়। মুক্তামণির বয়স হয়েছিল ১১ বছর। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর এক মাসের ছুটিতে বার্ন ইউনিট থেকে মুক্তামণি বাড়ি ফেরে। তবে ওর আর ঢাকায় ফেরা হয়নি। মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম বলেন, মুক্তামণির ডান হাতের অবস্থা খারাপ দেখে ১৫ দিন আগে ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় তিনি মুক্তার দুটি ছবি পাঠানোর কথা বলেন। ছবি দেখে তার হাতের অবস্থা খারাপ বলে জানান ডা. শারমিন সুমি। এরপর গত বুধবার সামন্ত লাল ফোন করে মুক্তামণির খোঁজ খবর নিয়ে রোজার পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। মুক্তামণির অবস্থার অবনতির পাশাপাশি জ্বর এলে তিনি গতকাল মঙ্গলবার আবার সামন্ত লালের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানান।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তওহীদুর রহমান বলেন, অবস্থার অবনতি হয়েছে শুনে গতকাল দুপুরে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ফরহাদ জামিল ও অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ মো. হাফিজুল্লাহকে মুক্তামণির বাড়িতে পাঠান। ফরহাদ জামিল বলেন, তিনি ও হাফিজুল্লাহ মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তামণির বাড়িতে গিয়েছিলেন। মুক্তামণির শরীরে তখন জ্বর ছিল। রক্তশূন্যতায় ভুগছিল সে। হাতের ক্ষত আরও বেড়ে গিয়েছিল। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তার রোগ শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভালো করে সে কথা বলতে পারছিল না। বিষয়টি তাঁরা ডা. সামন্ত লাল সেনকে বিস্তারিত জানান। তবে মুক্তামণি ও তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন আর ঢাকায় যেতে চাচ্ছিলেন না। মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, আজ বুধবার সকালে মুক্তামণি তাকে কাছে ডাকেন। তার ভালো লাগছে না বলে জানায়। সাতটা ৫০ মিনিটের দিকে সে পানি চায় তার কাছে। এরপর পানি পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খবর শুনে চিকিৎসক ফরহাদ জামিল ছুটে আসেন। তিনি মুক্তামণির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।